দক্ষিণাঞ্চলে কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে চাষিদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটছে

বরিশাল থেকে এম.মিরাজ হোসাইন: বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। কৃষি বিভাগ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহিত করতে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। ফলে সর্বস্তরে কৃষিখাতে যান্ত্রিকীকরণের প্রসার ঘটায় ক্রমেই এ জনপদের চাষিদের ভাগ্যের উন্ন্য়ন ঘটতে শুরু করেছে।

Barisal Photo=01
লাঙ্গল-হালের বলদ, মই বাদ দিয়ে বর্তমানে ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলারের মতো নানান প্রযুক্তি ব্যবহার করেছ কৃষক

এক সময়ের লাঙ্গল-হালের বলদ, মই এসব বাদ দিয়ে বর্তমানে ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলারের সাহায্যে অতি অল্প সময়ে, কম পরিশ্রমে অধিক পরিমাণে জমি চাষ করা হচ্ছে। এভাবে কৃষি উৎপাদনের সামগ্রিক ব্যবস্থায় যান্ত্রিকীকরণ বাড়ছে। বর্তমানে এ জনপদে ধানের চারা রোপন, ধান কর্তন ও মাড়াই সবকিছুই হচ্ছে মেশিনের সাহায্যে। সরকারি পর্যায়ে দেশের কৃষকদের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য ও দেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বেশি ফলনের লক্ষ্যে জেলার প্রতিটি উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। যে কারনে উচ্চ ভূমিতেও সেচ, সার ও অন্যান্য বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় চাষাবাদ করে সোনার ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে।

প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল না হয়ে পাম্প এবং গভীর ও অগভীর নলকূপের সাহায্যে সেচ দেওয়া, পোকা মাকড় দমনে বিষমুক্ত কীটনাশক ব্যবহার, অধিক ফসল উপাদনের জন্য জমিতে ব্যবহার করা হচ্ছে গুটি ইউরিয়া সার। বীজ সংরক্ষণ ব্যবস্থাও হচ্ছে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে।

বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল আলম বলেন, দেশের খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলায় আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতির প্রসার এখন সময়ের দাবি। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে কৃষি বিভাগ ও কৃষকের যৌথ প্রচেষ্টায় জনসংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার পরেও খাদ্য উৎপাদন বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষি প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে চাষিরা ফসল উৎপাদন করায় গত কয়েক বছর থেকে দক্ষিণাঞ্চলে খাদ্য উৎপাদন উদৃত্ত্ব থাকছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বরিশাল অঞ্চলের উপ পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলার চাষিদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগ থেকে ইতিমধ্যে পর্যাপ্ত পরিমান পাওয়ার টিলার, পাওয়ার পেসার, গুটি ইউরিয়া বানানোর মেশিন (ব্রিকেট), গুটি পোতা মেশিন প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতি মৌসুমে চাষিদের আরও চাষাবাদে উৎসাহ যোগাতে উপজেলার বিভিন্নস্থানে প্রদর্শনী প্লট প্রদর্শন করা হচ্ছে। এ সমস্ত প্রদর্শিত প্লট দেখে চাষিরা নানা ধরনের প্রযুক্তির সাথে দ্রুত পরিচিত হতে পারায় খুব অল্প সময়ে এর সুফল সর্বত্রই ছড়িয়ে পরেছে।

বরিশালের মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু বলেন, তার ইউনিয়নের কৃষকদের মাঝে উন্নত জাতের ধান-বীজ সরবরাহ, মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণ, লক্ষ্যাভিমুখী কৃষি সহায়তা প্রদান, কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে কৃষি ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধি ও তদারকি, সেচের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, রাসয়নিক সারের পরিবর্তে ভার্মি কম্পোষ্ট সার, জৈব সার উৎপাদন এবং নামমাত্র মূল্যে বাজারজাতকরণ, কৃষিপণ্যের বহুমুখীকরণসহ বাজারজাতকরণের সুবিধা সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষিখাতের প্রবৃদ্ধি অর্জনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে কৃষকদের সচেতন করা হয়েছে। ফলে গত চার বছর থেকে ইউনিয়নের বাৎসরিক খাদ্য চাহিদার চেয়ে প্রতিবছর ৭৭৬ মেট্রিক টন খাদ্য শষ্য বেশি উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে। এর আওতায় রাইস প্রিন্টার যন্ত্রের সাহায্যে ধানের চারা রোপণ, আধুনিক পদ্ধতিতে ধান কর্তন ও মাড়াই ইতিমধ্যে চাষিদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। তা ছাড়াও ধানের নতুন নতুন জাতের সম্প্রসারণ এবং ধান, পাট ও সবজিতে গুটি ইউরিয়া, সুষম সার ব্যাবহার এবং এমপিটে মিশ্র সম্প্রসারণ প্রযুক্তিসহ নানা ধারনের প্রযুক্তির সাথে দিন দিন চাষিরা পরিচিতি লাভ করার ফলে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় চাষিরা এর সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে।