বাগেরহাট-মংলা-খুলনা মহাসড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে, ১০ মাসে নিহত ২৩, আহত শতাধিক

বাগেরহাট থেকে বাবুল সরদার: বাগেরহাট-মংলা-খুলনা ব্যস্ততম মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনা ক্রমশ: বাড়ছে। গত ১০ মাসে এই মহাসড়কে কমপক্ষে ২১ টি দুর্ঘটনায় অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছেন। এ সময়ে শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। দীর্ঘ এ মহাসড়কের একমাত্র কাটাখালী ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কোনও স্ট্যান্ড বা মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে অনেকে মনে করেন। তাছাড়া কাটাখালি ট্রাফিক আইল্যান্ডটিও ভগ্ন দশায় বছরের পর বছর পড়ে আছে।

সংশ্লি¬ষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ১০ মাসে এ সড়কে ২১টি দুর্ঘটনায় ২৩ নারী-পুরুষ-শিশু নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে শতাধিক। একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানী বৃদ্ধি পেলেও সড়ক দুর্ঘটনা রোধের জন্য জেলা ট্রাফিক বা হাইওয়ে পুলিশ প্রশাসনের তেমন কোনও উদ্যোগ চোখে পড়ে না। তাছাড়া অদক্ষ চালক, ক্রটিপূর্ণ যানবাহন, অসচেতনতার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় স্থানীয় জনসাধারণ মহাসড়কের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েনের জোর দাবি করছেন।

এ সড়কে যানবাহনের চলাচল পূর্বের তুলনায় অনেক গুণ বেড়েছে। কিন্তু কাটাখালী বাসস্ট্যান্ড, টাউন নওয়াপাড়া, মোড় বাসস্ট্যান্ড, সিএন্ডবি বাজার বাসস্ট্যান্ড, ফকিরহাট বিশ্বরোড মোড়, চুলকাঠি বাসস্ট্যান্ড, ফয়লা বাজার বাসস্ট্যান্ড ও ভাগা বাসস্ট্যান্ডে কোন ট্রাফিক পুলিশ নেই। গুরুত্বপূর্ণ এ স্ট্যান্ড বা মোড়গুলিতে যদি ট্রাফিক পুলিশ থাকত তবে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসতো বলে অনেকেই মত দেন।

গত বছরের ৮ জুলাই মাসে কুদির বটতলায় পিকাপের ধাক্কায় ফকিরহাটের অনুপ ঘোষ নিহত হয়, ১৫ আগষ্ট ভট্টের ব্রীজ এলাকায় মটর সাইকেল দুর্ঘটনায় মোংলার জাকির গাজীসহ দুইজন নিহত হয়, ১৯ আগষ্ট টাউন নওয়াপাড়ায় বিআরটিসি বাসের ধাক্কায় নওয়াপাড়ার শেফারী চক্রবর্তী, ১ অক্টোবর কাটাখালী মটর সাইকেল দুর্ঘটনায় বাহিরদিয়ার ফারুক হোসেন, ২২ অক্টোবর খাজুরায় মটর সাইকেল দুর্ঘটনায় টাউন নওয়াপাড়ার মিঠুন দে, ১৫ অক্টোবর শুকদাড়ায় অটোভ্যান উল্টে পাগলার ফারুক, ৬ নভেম্বর চুলকাটি বাজারে মাইক্রো ধাক্কায় ফেরদাউস, ১২ নভেম্বর পিরোজপুর সড়কের মাদ্রসার সামনে বাসের ধাক্কায় ইজিবাইক চালক শহীদুলসহ দুজন, ২১ নভেম্বর ফয়লা স্ট্যান্ডে মটর সাইকেল দুর্ঘটনায় মুকুল, ২৮ নভেম্বর লখপুর সড়ক বিভাগের অফিসের সামনে বাস চাপায় মাদ্রসা ছাত্র কাওছার আলী, ২২ অক্টোবর খাজুরায় ধান বোঝাই পিকআপ উল্টে হেলপার মানিক, ১৮ ডিসেম্বর সিএন্ডবি বাজারে বাসের ধাক্কায় ভূট্ট, ৯ ফেব্রয়ারি কানার পুকুরে নছিমুন উল্টে এক অজ্ঞাত মহিলা নিহত হয়।

চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি লখপুরে ট্রাকের ধাক্কায় মটর সাইকেল চালক জুয়েল, ২২ জানুযারি খাজুরায় মটর সাইকেলের ধাক্কায় লখপুরের আহত রফিক ২৭ জানুয়ারি ঢাকায় মারা যায়। এছাড়া ২৩ জানুয়ারি সুদাড়ায় সিমেন্ট বোঝাই ট্রাক উল্টে হেলফার জুয়েল, ১৪ ফেব্রয়ারি শুকদাড়ায় মটর সাইকেল চাপায় নরেন্দ্রনাথ দাশ, ৬ মার্চ ভালের দোকানের পার্শ্বে বাস চাপায় শিশু ইষারত আলী, ৮ মার্চ কাঠালতলায় ত্রিমুখী সড়ক দুর্ঘটনায় মতিউর রহমান স্বপন মুন্সি ও ৯ মার্চ ধরেরবাড়ী এলাকায় বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে রওশনারা বেগম নিহত হয়।

একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় শুধু প্রাণহানীই হচ্ছে না, এক একটি পরিবারও নিঃস্ব হচ্ছে। তার পরেও পুলিশ প্রশাসনের টনক নড়ছে না।

এব্যপারে কাটাখালী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুল মান্নান ফারাজী বলেন, তাদের থানায় লোক ও জনবল সংকটের কারণে ইচ্ছা থাকা সত্বেও সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছেন না।