ঈশ্বরদী (পাবনা) থেকে স্বপন কুমার কুন্ডু: ঈশ্বরদীর মুলাডুলিতে মেলায় জুয়ার আসর বসানোকে কেন্দ্র করে মূলাডুলি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ১ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে । ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার দুপুরে মুলাডুলি স্টেশন সংলগ্ন সূধার পুকুর পাড়ে কালিমন্দির এলাকায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হিন্দু সম্প্রদায়ের বারণী স্নান ও চৈত্র মেলায় জুয়ার আসরের ভাগ বাটোয়ারা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ১নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগ এর বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক খন্দকার বাঁধন ও ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি খন্দকার এমদাদুল হক মিলন এর নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রথমে বচসা, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, গোলাগুলি ও পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এসময় মাঠে অসংখ্য মানুষের সামনে প্রকাশ্যে গুলি করলে মুলাডুলি ইউনিয়ন ১নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার বাঁধন বুকে গুলি বিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।
মেলা মাঠে উপস্থিত স্থানীয় লোকজন জানান, মুলাডুলি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল আলম বাদল বাঁধনকে গুলি করে হত্যা করে এবং ফাঁকা গুলি করতে করতে পালিয়ে যায়। গুলির শব্দ শুনে এ সময় মেলায় উপস্থিত দর্শকরা দ্বিগবিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে।
মেলা কমিটির আহবায়ক সচিন জানান, ঈশ্বরদীর মুলাডুলি স্টেশন সংলগ্ন সূধার পুকুরে (সন্ধার পুকুর) পাড়ে কালি মন্দিরের পাশে চৈত্র পূজাকে কেন্দ্র করে মেলা ও বারণীর স্নান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে পুকুরপাড়ে দিনব্যাপী মেলার আসর বসে। প্রতিবছর এই পুকুর পাড়ে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বারণীর স্নানের আয়োজন করে। এলাকার হাজার হাজার হিন্দু নারী পুরুষ ও শিশুরা এই পুকুরে স্নান করে বিভিন্ন ধরনের প্রসাদ সামগ্রী ও ফলমূল পুকুরে উৎস্বর্গ করে পূজা অর্চনার মাধ্যমে আরাধনা করে থাকে। এ বছরও একই জায়গায় ১৮ মার্চ সকাল হতে স্নানের আয়োজন করা হয়। এজন্য পুকুর পাড়ে শতাধিক দোকানপাট বসে। গান বাজনা, ঢাক-ঢোল ও বাঁশি বাজিয়ে মেলা প্রাঙ্গণকে উৎসবমুখর করে তোলা হয়।
মেলাকে কেন্দ্র করে মুলাডুলি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও যুুবলীগের সভাপতি খন্দকার এমদাদুল হক মিলনের নেতৃত্বে জুয়ার আসর বসানো হয়। এ সময় মুলাডুলি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন মিঠু তার লোকজন নিয়ে মেলা মাঠে উপস্থিত হয়ে মেলার কর্তৃত্ব গ্রহণ করলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় মিঠু গ্রুপের কামাল হোসেন মিঠু, হাবিবুর রহমান মৎস হাবিব, আলমগীর হোসেন, আমিনুল ইসলাম, জামাল উদ্দিন, বাদল, রুবেলসহ কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়। এছাড়াও মিলন গ্রুপের অজ্ঞাতনামা ২৫/৩০জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। মিলন এর ভাতিজা বাঁধন (৩০) এসময় বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। নিহত বাঁধন মূলাডুলি ইউনিয়ন ১নং ওয়ার্ড ছাত্ররীগের সাধারণ সম্পাদক ও মূলাডুলি স্টেশন পাড়ার মৃত বাবুল খন্দকারের ছেলে।
এ সংবাদ পৌঁছামাত্র এলাকাবাসী ও মিলন গ্রুপের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে মুলাডুলি স্টেশনে রাখা কামাল হোসেন মিঠুর প্রাইভেট কার ও তার গ্রুপের আরো ৫টি মোটর সাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় ষ্টেশন এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়লে মিঠু গ্রুপের লোকজন মেলার স্থান ত্যাগ করে এবং মিলন গ্রুপের লোকজন এলোপাথারী ভাংচুর শুরু করে। খবর পেয়ে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ,ডিবি, র্যাব ও রিজার্ভ ফোর্স ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। শত শত মানুষ পুলিশের উপস্থিতিতে মৃত লাশ নিয়ে মিছিল করে হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে শ্লোগান দিতে থাকে।
এ ব্যাপারে মুলাডুলি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন মিঠু বলেন, মেলায় জুয়া খেলা বন্ধ করার জন্য আওয়ামী লীগ নেতা সচীন আবেদন করায় আমি ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করি। এরপর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর ১০/১২ টি জুয়ার আসর ভেঙ্গে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় মেলা পরিচালনা কমিটির লোকজন এলোপাথারি পাথর নিক্ষেপ করে আমাদের ওপর। অবস্থা বেগতিক দেখে আমরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করি। খন্দকার মিলন ও তার লোকজন আমার প্রাইভেট কারসহ ৫টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। পরে শুনি বাঁধন নিহত হয়েছে।
ঈশ্বরদী সার্কেল এর সহকারী পুলিশ সুপার শাহানুর আলম পাটোয়ারী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে এবং লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা মর্গে পাঠনো হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় মামলা দায়ের হয়নি তবে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।