রাজশাহীতে নাশকতার মামলায় জড়ানো হচ্ছে সাংবাদিকদের

রাজশাহী থেকে কাজী শাহেদ: রাজশাহীতে নাশকতার মামলায় সাংবাদিকদের জড়াচ্ছে পুলিশ। এ পর্যন্ত রাজশাহীতে কর্মরত তিনজন সাংবাদিকের নামে নাশকতার মামলা দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে একজনকে বাস পোড়ানোর মামলা এবং অপর দুইজনকে ককটেল বিস্ফোরণের মামলায় জড়ানো হয়েছে।

দৈনিক যুগান্তরের রাজশাহী ব্যুরো প্রধান আনু মোস্তফাকে বাস পোড়ানোর দুইটি মামলাসহ নাশকতার তিনটি মামলায় আসামি করা হয়েছে। ককটেল বিস্ফোরণের একটি মামলায় প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম দুখু ও চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের ক্যামেরাপারসন মো. রায়হানকে আসামি করা হয়েছে।

১ মার্চ নগরীর শিরোইল ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গ্যারেজ করে রাখা হানিফ এন্টারপ্রাইজের দুটি বাস ভাংচুুর করে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ২ মার্চ রাতে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার উপ-পরিদর্শক শরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ১২ জনসহ ২০ জনকে আসামি করে আলাদা দুটি মামলা করেন। আসামির মধ্যে আনু মোস্তফার নাম আট নম্বরে উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০ দলের ডাকা হরতাল অবরোধ সফল করতে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা পল্টুর নেতৃত্বে আসামিরা সশস্ত্র অবস্থায় ঘটনাস্থলে গিয়ে হানিফ এন্টারপ্রাইজের দুটি বাস ভাঙচুর ও পেট্রলবোমা দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।

হানিফ এন্টারপ্রাইজের দুটি বাস পোড়ানোর ঘটনায় হানিফের ব্যবস্থাপক মনজুর রহমান খোকন ঘটনার দিনই বোয়ালিয়া থানায় এজাহার দেন। কিন্তু পুলিশ তার এজাহারটি ফেরত দিয়ে নিজেরাই বাদী হয়ে মামলা রেকর্ড করেন। মনজুর রহমান বলেন, ‘আমরা জানি না কাকে আসামি করা হয়েছে। তবে আমরা যে এজাহারটি দিয়েছিলাম সেটি ফেরত দিয়েছে পুলিশ।’

এদিকে প্রথম মামলায় সাংবাদিক আনু মোস্তফার বাবার নামের স্থলে অজ্ঞাত উল্লেখ করা হয়েছে। আনু মোস্তফা যে রাজশাহীর সক্রিয় সাংবাদিক সে বিষয়টি এজাহারে সুকৌশলে গোপন করেছে পুলিশ।

অপর দিকে ৭ ফেব্রুয়ারি নগরীর সাহেব বাজার মনিচত্বর এলাকায় রাত সাতটা ৫০ মিনিটের সময় একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।  পরে ৮ ফেব্রুয়ারি এ ঘটনায় নগরীর বোয়ালিয়া থানার উপ-পরিদর্শক মাহামুদুল হাসান বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত তিনজনসহ ২০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন এবং সাবেক মেয়র ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনুকেও আসামি করা হয়েছে।

এজাহারের ১৬ নম্বর আসামির নাম লেখা হয়েছে মো. রায়হান। তার বাবার নাম অজ্ঞাত লেখা হয়েছে। ঠিকানা লেখা হয়েছে নগরীর রাজপাড়া থানার ডিঙ্গাডোবা পাঠানমোড়। মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) পুলিশ চ্যানেল টুয়েন্টি ফোরের ক্যামেরাপারসন রায়হানের বাড়িতে তদন্ত করতে যায়। পুলিশ দাবি করে রায়হান জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এরপর বিষয়টি জানা যায় সাংবাদিক রায়হানকেই ককটেল বিস্ফোরণের মামলায় আসামি করা হয়েছে।

বুধবার মামলার এজাহার তুলে দেখা যায় মামলার ১৭ নম্বর আসামি করা হয়েছে শহীদুল ইসলাম দুখুকে। তার বাবার নাম অজ্ঞাত লেখা হয়েছে। বাড়ির ঠিকানা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে নগরীর শিরোইল কাঁচাবাজারের পাশে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাবার নাম উল্লেখ না করলেও শহীদুল ইসলাম দুখু নামে প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক ছাড়া ওই এলাকায় আর কোনো ব্যক্তি নেই।

তবে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেছেন, ‘শহীদুল ইসলাম দুখুর বাবার নাম উল্লেখ করা হয়নি। এটা প্রথম আলোর সাংবাদিক তাও বলা হয়নি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকলে এটা নিয়ে আপনাদের ‘টেনশন’ নেই।’

শহীদুল ইসলাম দুখু বলেন, মনি চত্বরে ককটেল বিস্ফোরণের সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি কোনো ছবি তোলেননি।

এ ব্যপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. শামসুদ্দিন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। ঢাকায় আছেন জানিয়ে পরে ফোন করতে বলেন।