মৌলভীবাজার থেকে আজিজুল ইসলাম: মৌলভীবাজারের সাত উপজেলায় মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা পাঁচ বছর ধরে সরকারি বই বিতরণের জন্য বরাদ্দ করা টাকা আত্মসাত করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত পাঁচ বছরে আত্মসাত করা অর্থের পরিমাণ ২৫ লক্ষাধিক টাকা। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সরকার ২০১০ সাল থেকে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই বিতরণ করে আসছে। শুধু বিনামূল্যে বই বিতরণই নয়, বিদ্যালয় পর্যন্ত বই প্রেরণের সমুদয় অর্থ সরকার বহন করে। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উপজেলা সদরে আসা বই নিতে আসা শিক্ষকরা সেই খরচ পান না। উল্টো বই নিতে তাদের কাছ থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা খরচ বাবত টাকা আদায় করেন।
মৌলভীবাজার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলায় মোট ২৯১টি প্রতিষ্ঠানে অর্থাৎ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় সরকারি বই বিতরণ করা হয়। এতে জেলার সাতটি উপজেলায় বই পৌঁছানোর খরচ বাবত বছরে ৫ লক্ষাধিক টাকা বরাদ্ধ আসে। বরাদ্ধকৃত টাকাগুলো স্কুল পর্যায়ে না দিয়ে সম্পূর্ণটাই আত্মসাৎ করেন। বই নিতে আসা শিক্ষকদের কাছ থেকে বই লোড- আনলোড এবং গোডাউন ভাড়ার কথা বলে টাকা নেওয়া হয়ে থাকে।
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় চলতি বছর উপজেলার ১৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৫টি মাদ্রাসায় বই বিতরণ খরচ বাবত ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বই বিতরণ শেষে একটি মাস্টার রোল তৈরি করে তাতে শিক্ষকদের স্বাক্ষর নেন। উপজেলা সদর থেকে বিদ্যালয় পর্যন্ত যাতায়াত খরচের টাকা না পেয়েও প্রাপ্তির মাস্টার রোলে স্বাক্ষর করা নিয়ে শিক্ষকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
কুলাউড়া উপজেলায় ৩৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১৭টি মাদ্রাসায় বই বিতরণ করা হয়। কিন্তু কুলাউড়ার মাধ্যমিক শিক্ষকরা খরচ বাবত কোন টাকা পাননি বলে জানান। তারাও এ ব্যাপারে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের কাছ থেকে স্বচ্ছতা আশা করেন।
জুড়ী উপজেলার শিক্ষকরা টাকা না পেলেও বিদ্যালয় পর্যন্ত সরকারি খরচে বই পৌঁছানোর খবরটি ৫ বছর পরে হলেও নিশ্চিত হয়েছেন। কিন্তু জেলার কুলাউড়া, বড়লেখা, সদর, কমলগঞ্জ, রাজনগর কিংবা শ্রীমঙ্গলের শিক্ষকরা বিষয়টি জানেনই না। এসব উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা না জানিয়ে সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করেন।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সুবোধ চন্দ্র চৌধুরী জানান, এখন বই সরাসরি উপজেলা পর্যায়ে চলে যায়। সেই বই বিতরণ কার্যক্রমের সভাপতি হলেন ইউএনও এবং সদস্য সচিব হলেন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার। তাদের নামেই চেকের মাধ্যমে বরাদ্ধকৃত টাকা আসে। তারাতো সেই টাকা দেয়। তাছাড়া তাদেরও একটা খরচ আছে। যেমন বই সংরক্ষণে নাইট গার্ড রাখা। ফলে পুরোটা না হলেও কিছুটা দেয় বলে তিনি দাবি করেন।