শেরপুর থেকে হাকিম বাবুল: শেরপুরে কৃষকের মাঠে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) উদ্ভাবিত বিটি বেগুনের উপযোগিতা পরীক্ষার ওপর শুক্রবার এক মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে। সদর উপজেলার হাতিআলগা গ্রামে বারি’র সরেজমিন গবেষণা বিভাগ ও আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, জামালপুর যৌথভাবে এ মাঠ দিবসের আয়োজন করে। মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বারি’র গবেষণা পরিচাল ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন। অন্যান্যের মধ্যে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সামছুর রহমান, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নারায়ন চন্দ্র বসাক, ড. আব্দুল আউয়াল, ড. মঞ্জুরুল কাদের, ড. শহীদুজ্জামান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পিকন কুমার সাহা, স্থানীয় বিটি বেগুন চাষি মোবারক হোসেন, লিখন মিয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মাঠ দিবসে প্রধান অতিথি বারি’র গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন বলেন, বেগুন চাষে শতকরা ৭০/৮০ ভাগ ফলন নষ্ট হয় ফল ও ডগা ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণের কারণে। আর মোট উৎপাদন খরচের শতকরা ৪০ ভাগ খরচ হয় পোকা দমনের ওষুধ কিনতে। কিন্তু বিটি বেগুনে ‘ব্যাসিলাস থোরিঞ্জিনসিস’ নামে বেগুনের ফল ও পোকা ছিদ্রকারী ব্যাকটেরিয়া জিন দিয়ে বেগুন গাছকে এ পোকার প্রতিরোধী করা হয়েছে। এতে ফলন যেমন বাড়ে তেমনি উৎপাদন খরচও অনেক কম হয়। তাছাড়া এ বেগুন খেতেও বেশ সুস্বাদু। এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই। কৃষি বিজ্ঞানীরা ৯ বছর গবেষণার পর সরকারের অনুমোদন নিয়ে এটি কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে শেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পিকন কুমার সাহা বলেন, বিটি বেগুন উৎপাদনে যেহেতু কীটনাশক কম ব্যবহার করতে হয়, তাই এটি পরিবেশবান্ধব। এতে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন সহজ হয়। বিএআরসি, জামালপুরের সরেজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সামছুর রহমান বলেন, বিটি বেগুন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা ভ্রান্ত ধারণা ছড়ানো হচ্ছে। নিজেদের ব্যবসা কমে যাওয়ার ভয়ে কীটনাশক কোম্পানিগুলোই এ ধরনের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এ বছর দেশের ১৮টি জেলায় ১০৮ জন কৃষক বিটি বেগুনের প্রদর্শনী প্লট করেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিটি বেগুন চাষকারী স্থানীয় স্থানীয় কৃষক মোবারক হোসেন, লিখন মিয়া ও আব্দুর রহমান বলেন, বিটি বেগুনের উৎপাদন অনেক বেশি এবং পোকার আক্রমণ নেই বললেই চলে। কোনও কীটনাশক দিতে হয়নি। কিন্তু ‘কাজলা’ জাতের বেগুনটির রং কালো হওয়ায় বাজারে এর দাম কম। স্থানীয় বোতল জাত এবং সাদা জাতের বিটি বেগুনের বীজ সরবরাহের দাবি জানান তারা।
মাঠ দিবসে সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শতাধিক কৃষক ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের কৃষি বিজ্ঞানী, সম্প্রসারণবিদ, এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও স্থানীয় গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেন। মাঠ দিবসের শুরুতেই অংশগ্রহণকারীরা কৃষক মোবারক হোসেনের ২২ শতক জমিতে চাষকৃত ‘নয়নতারা’ ও ‘কাজলা’ জাতের বিটি বেগুন আবাদের ক্ষেত পরিদর্শন করেন।