সাত দিনেই অচল কোটি টাকার সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল

বরিশাল থেকে এম.মিরাজ হোসাইন: স্থাপনের সাতদিনের মধ্যেই অকার্যকর হয়ে গেছে বরিশাল নৌ-টার্মিনালে ১০ কিলোওয়াটের বিদ্যুৎ সরবরাহে সক্ষম সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল। বরিশাল নৌ-বন্দরে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে গত বছরের ১১ জুন সরকারের নৌ মন্ত্রণালয় এই প্যানেল স্থাপন করে। স্থাপনের এক সপ্তাহের মাথায় তা বিকল (অকার্যকর) হলেও মেরামতের উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। ফলে বর্তমান ঝড়ের মৌসুমে বরিশাল বিআইডব্লিটিএ’র পক্ষে যাত্রীবাহী নৌ-যানসহ কোন নৌ-যানের সাথেই সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।

Barisal
প্যানেল স্থাপনের এক সপ্তাহের মধ্যেই তা অকার্যকর হয়ে যায়

প্যানেলটি স্থাপনের মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই অকার্যকর হয়ে যাওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ নিম্নমানের সামগ্রী সরবরাহকেই দায়ী করেছেন। বরিশাল পোর্ট অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, তারা এ কারণে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। তবে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলেও সূত্রটি দাবি করেছেন। সূত্রমতে, বরিশাল নৌ-বন্দরটির উন্নয়ন ও আধুনিকীকরনের জন্য ১৭.৬ কোটি টাকার প্রাক্কালন নির্ধারণ করা হয়। ২০১০ সালের ৪ মার্চ নৌ-পরিবহনমন্ত্রী উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেন এবং ২০১২ সালের ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌ-বন্দরটির উদ্বোধন করেন।

১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বরিশাল নৌ-বন্দরের উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ১৫৫৪ বর্গফুট এলাকায় তিন তলা আধুনিক টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, দেড় হাজার বর্গফুট এলাকায় গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা, ১২’শ মিটার স্টিল সীমানা প্রাচীর ও রিটেনিং দেয়াল, ১২০ ফিটের ৬টি পন্টুন, চারটি স্টিলের গ্যাংওয়ে নির্মাণ, চার শত বর্গফুটের কার্গোশেড ও পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন। আরও জানা গেছে, সম্প্রতি নৌ মন্ত্রণালয় বরিশালসহ দেশের চারটি নৌ-বন্দরে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ৫০ কিলোওয়াট সৌর বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ১ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে আরেকটি প্রকল্প গ্রহণ করে। ৫০ কিলোওয়াট বিদ্যুতের মধ্যে ঢাকার জন্য ২০ এবং চট্টগ্রাম, নারায়নগঞ্জ ও বরিশাল নৌ-বন্দরের প্রতিটির জন্য ১০ কিলোওয়াট সৌর বিদ্যুৎ সরবরাহ প্যানেল স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। গত বছর এই প্রকল্পের আওতায় সবকটিস্থানে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল স্থাপন করা হয়। ২০১৪ সালের ১১ জুনে এসব প্যানেল স্থাপন করা হয়। কিন্তু মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বরিশালের সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল অকার্যকর হয়ে যায়। সেই থেকে এখন পর্যন্ত প্যানেলটি অকার্যকর রয়েছে।

বরিশালের পোর্ট অফিসার মো. গুলজার আলী জানান, এখনই প্যানেলটি মেরামত করা না হলে আসন্ন গ্রীষ্ম মৌসুমে যখন প্রায়শই বিদ্যুৎ থাকবে না তখন নৌ-যানগুলোর সাথে সংযোগ রক্ষা করা সম্ভব হবেনা। এমনকি যাত্রীদের নৌযানে ওঠানামার সময়েও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে না। এ ছাড়া বিপুল অংকের অর্থ ব্যয় করেও বার্ষিক অতিরিক্ত ৫ লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল গুণতে হবে।

বরিশাল নৌবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আবুল বাশার মজুমদার জানান, বরিশাল নৌ-বন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ত্রিশ হাজার যাত্রী নৌপথে যাতায়াত করে। কিন্তু তাদের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক তদারকির ব্যবস্থাটি অকার্যকর হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও লঞ্চ মালিক সমিতির শীর্ষ নেতা সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, এখনই প্রায়দিনই সন্ধ্যায় টার্মিনালে বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকেনা। অন্ধকারে যাত্রীদের ওঠানামা নিয়ে প্রায়ই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে লঞ্চগুলোকে সার্চ লাইটসহ অন্যান্য বাতি জ্বালিয়ে রাখতে হয়। বরিশাল বিআইডব্লিটিএ’র প্রকৌশলী এজেডএম শাহ নেওয়াজ কবির জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা সত্বেও কোন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।