মুক্তিযুদ্ধের ৪২ বছর পর রাজনগরে নির্মিত হলো ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্তম্ভ’

মৌলভীবাজার থেকে আজিজুল ইসলাম: ‘আমরা গর্বিত। উচ্ছ্বাসিত। কি যে ভাল লাগছে বলে বুঝাতে পারবনা। এই প্রথম ফুল দিলাম নিজেদের একটি স্মৃতি স্তম্ভে’। মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে এভাবেই অনুভুতি প্রকাশ করছিলেন মুক্তিযোদ্ধা কুতুবুর রহমান। এতদিন মুক্তিযুদ্ধের কোনও  স্মারক ছিল না রাজনগরবাসীর জন্য। জাতীয় দিবসগুলোতে ভাষা শহীদের জন্য নির্মিত মিনারেই ফুল দিতেন মুক্তিকামী মানুষের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা। অবশেষে রাজনগরবাসীর জন্য নির্মিত হলো একটি ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্তম্ভ’। ৪২ বছর পর সেই স্তম্ভেই দেওয়া হল প্রথম স্বাধীনতা দিবসের পুষ্পস্তবক।

mukti judho sriti0
রাজনগরে নব-নির্মিত মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্তম্ভ

লাল সিরামিক ইটের বেদী, দুই পাশে কালো শোকের দেয়াল আর মধ্যখানে সাদা পাথরের মত মুক্তিকামী মানুষের দাঁড়িয়ে যাওয়ার প্রতিচ্ছবি। মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্তম্ভের ডিজাইনার উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ রুবাইয়াত জামান। তিনি বলেন, লাল রঙের সিরামিক ইট দেওয়া হয়েছে বেদীতে এটি রক্তের প্রতীক। বেদীতে নির্মিত দুটি কালো দেয়াল শোকের প্রতীক। মাঝের সাদা দেয়াল হল দাঁড়িয়ে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধার প্রতীক। রক্ত আর শোকের মাঝেইতো দাঁড়িয়ে যায় আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা। মাঝের এই দেয়ালে খুঁদাই করে লেখা আছে যুদ্ধে শহীদ ও বেঁচে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নাম।
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজনগর উপজেলা প্রকৌশল অফিস স্মৃতি স্তম্ভটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী নবনির্মিত এ স্তম্ভেই স্বাধীনতা দিবসে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে  উদ্বোধন করেন ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্তম্ভে’র।

৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শহীদ রাজনগর উপজেলার বাতির মিয়া, সমছু মিয়া, সত্যেন্দ্র কুমার দাশ, মনির মিয়া, সুদর্শণ দেব, প্রদীপ কুমার দাশ, তরণী দেব, অরুণ চন্দ্র দত্ত, শিশির রঞ্জন দেব, দিলীপ কুমার দেব, কনোর মিয়া, মদরিছ আলী, হদিসসহ ১৩ জন শহীদ ও ১৩৮ জন মুক্তিযুদ্ধার নাম খুঁদাই করে লেখা রয়েছে সাদা পাথরে।
মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক আমীর আলী বলেন, এতদিন পর আমাদের একটি স্তম্ভে ফুল দিতে পেরেছি বলে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। মনে হচ্ছে এই মাত্র যুদ্ধ জয় করে ফিরলাম।

রাজনগর উপজেলা মুক্তিযুদ্ধ কমান্ড কাউন্সিলের কামান্ডার সজল চক্রবর্তী বলেন, আমাদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এই স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্তম্ভে ফুল দিতে পেরে নিজেকে ধণ্য মনে করছি। নতুন প্রজন্ম এ ফলক ও শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নাম দেখে অনুপ্রাণিত হবে। তাদের মাঝে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে।