হাকালুকি হাওর থেকে ফিরে আজিজুল ইসলাম: এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরের ১৭টি বিলে অভয়াশ্রমের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিন্তু সরকারের অভয়াশ্রম ঘোষিত নিমু বিলটি প্রভাবশালী বিএনপি নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের দখলে থাকায় গত ৫ বছরেও বিলটি দখলমুক্ত করে অভয়াশ্রম বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। ফলে নিমু বিলে অভয়াশ্রম বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
সরকার ২০১০ সালে ৫টি এবং ২০১১ সালে ১২টিসহ মোট ১৭টি বিলকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করে। এরমধ্যে তেকোনী বিল, রঞ্চি বিল, নিমু বিল, মইয়াজুড়ি বিল, মাইসলার ডাক বিল, আগদার বিল, বিড়ালী খাল, কৈয়ারকোনা বিল (জুড়ী), খড়–য়া বিল ও কন্টিনালার করখালে পরিবেশ অধিদফতরের সিবিএ-ইসিএ প্রকল্প অভয়াশ্রম বাস্তবায়নের কাজ করছে। এছাড়া কৈয়ারকোনা বিল, বাইয়া বিল, গজুয়া বিল, পলোভাংগা বিল ও টোলার বিল অভয়াশ্রম বাস্তাবায়নের কাজ করছে ইউএসএআইডির ক্রেল প্রকল্প। আগামী জুন মাসে এসব প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। বেশির ভাগ বিলের অভয়াশ্রমের কাজ শেষ হয়েছে। কিছু বিলে অভয়াশ্রমের কাজ শেষ পর্যায়ে। শুধু নিমু বিলে অভয়াশ্রমের কাজ বাস্তবায়নে কোনও কাজ করা সম্ভব হয়নি বলে পরিবেশ অধিদফতরের সিবিএ-ইসিএ প্রকল্প সুত্রে জানা গেছে।
সরকার নিমু বিলকে ২০১১ সালে অভয়াশ্রম ঘোষণার পর বিলের পূর্বের ইজারা বাতিল করে দেয়। ইজারা বাতিলের আগে নিমু বিলের ইজারাদার ছিলেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রভাবশালী বিএনপি নেতা ইসকান্দার আলী। অভয়াশ্রম ঘোষণার পর তিনি ও তার ছেলেরা বিলটি জবর দখল করে রেখেছেন। ২১ দশমিক ৬৫ হেক্টর আয়তন বিশিষ্ট এই নিমু বিলটি বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর মৌজায় হলেও বাস্তবে গোলাপগঞ্জ উপজেলার শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের একেবারে কাছে। এর ফলে বিএনপি নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ইস্কান্দার ও তার লোকজন বিলটি সহজে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। ২০১৪ সালে বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উপস্থিতিতে বিলটি খননের উদ্বোধন করতে গেলে ইস্কান্দার চেয়ারম্যান ও তার লোকজনের বাধার মুখে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
সরেজমিন গোলাপগঞ্জ উপজেলার শরীফগঞ্জ ইউনিয়নে নিমু বিলের পার্শ্ববর্তী গ্রামে গেলে স্থানীয় লোকজন জানান, ইস্কান্দার চেয়ারম্যান একজন বিল খেকো লোক। তিনি ও তার ছেলে দুলাল, হেলাল ও হারিছের কাছে এলাকার মানুষ জিম্মি। তার রয়েছে নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী। তাদের ব্যবহার করে বিলটি দখলে রেখেছেন। বড়লেখা উপজেলা প্রশাসন বিলে কাজ করতে গেলে বাধা দেয় ইস্কান্দারের লোকজন। এরপর প্রশাসন এমনকি পরিবেশ অধিদফতরের সিবিএ-ইসিএ প্রকল্প নিমু বিলে অভয়াশ্রম বাস্তবায়নের আশা ছেড়ে দেয়।
সিবিএ-ইসিএ প্রকল্পের ন্যাচারাল রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট অফিসার বশির আহমদ জানান, নিমু বিলে অভয়াশ্রমের কাজ করতে না পেরে তেকোনী বিলের একটা অংশে তেকোনী বিল-২ নামে নতুন অভয়াশ্রম স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া কৈয়ারকোনা বিলেও (জুড়ী) স্থানীয় ধান চাষিদের দাবির মুখে কাজ বন্ধ আছে। তবে সেখানে স্থানীয় প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করে কাজ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে।
বড়লেখা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবু ইউছুফ জানান, বিলটি দখলমুক্ত করতে ফের উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করছি।
এ ব্যাপারে বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ মো. আমিনুল ইসলাম জানান, আমরা বিলটিকে অভয়াশ্রম করার জন্য কাজ করেছিলাম। কিন্তু যারা অভয়াশ্রম বাস্তবায়ন করবে তারা পরে অন্য বিলে কাজ করায় বিষয়টা আসলে সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। অবশ্যই এ ব্যাপারে আবার উদ্যোগ নেওয়া হবে। অভয়াশ্রম না হলেও সরকার যাতে রাজস্ব পায়, সে ব্যাপারে জেলার সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হবে।