রংপুর থেকে জয়নাল আবেদীন: ২৮ মার্চ রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে রংপুরের বীর জনতা পাক বাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটি ট্যাংক ডিভিশনের উত্তরাঞ্চলীয় হেড কোয়ার্টার রংপুর ক্যান্টনমেন্ট দখল করার জন্য ঘেরাও করতে গিয়ে পাক বাহিনীর বেপরোয়া গুলিবর্ষণে নিহত হয়েছে শত শত সংগ্রামী জনতা ।
স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও নিহত পরিবারগুলো পায়নি শহীদ পরিবারের মর্যাদা। অথচ ওই দিনের ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাওয়ের ঘটনা সারা দেশের স্বাধীনতাকামী মানুষকে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য উজ্জীবিত করেছিলো। প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিলো দেশব্যাপী ।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৭ মার্চ যে ভাষণ দিয়ে বাংলার জনগণকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছিলেন, সেই ভাষণে উজ্জীবিত হয়ে গোটা রংপুর জেলায় প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিতে থাকে জনতা। এরই মধ্যে রংপুর ক্যান্টনমেন্টে অবস্থানরত বাঙ্গালী সেনারা ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। বাঙ্গালী সৈনিকরা গোপনে খবর দেয় ২৮ মার্চ পাক সেনাদের বেশির ভাগ সদস্য প্রশিক্ষণের জন্য বাইরে অবস্থান করবে। এই সুযোগে ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণ করলে বাঙ্গালী সৈনিকেরা তাদের সাথে যোগ দিয়ে অস্ত্রাগার লুট করে ক্যান্টনমেন্ট দখল করবে। কিন্তু এই পরিকল্পনা পাক হানাদার বাহিনী জেনে ফেলে এবং তারা ক্যান্টনমেন্টের চারদিকে ভারি মেশিন গান নিয়ে অবস্থান নেয়।
২৮ মার্চ বেলা সোয়া ১১ টার দিকে হাজার হাজার মানুষ ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করার উদ্যেশ্যে যাত্রা করে । কিন্তু কাছাকাছি না যেতেই পাক বাহিনী বেপরোয়া গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এতে শত শত মানুষ নিহত হয় ।
অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়ে। ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় মানুষ। এরপর সারা রাত ধরে পাক বাহিনী নিহতদের লাশ নিসবেতগজ্ঞের কাছে একটি খালে জড়ো করে পেট্রোল ঢেলে জ্বালিয়ে দেয়। সেদিন যাঁরা জীবনকে বাজি রেখে ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণ করতে গিয়ে জীবন দিয়েছে তাদের পরিবারগুলো স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও পায়নি শহীদ পরিবারের মর্যাদা। সহায় সম্বলহীন পরিবারগুলো আনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের একটাই চাওয়া শহীদ পরিবারের মর্যাদা। ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও আন্দোলনের মূলনায়ক সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আমজাদ হোসেন দীর্ঘ ৪৫ বছরেও পাননি কোনও স্বীকৃতি। এ বীরযোদ্ধাকে এখন অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেননা তার পরিবার। মৃত্যুর আগে তিনি স্বীকৃতি চান।
ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও আন্দোলনে নিহত আহাদ আলীর ছেলে শরফুদ্দিন চান তার বাবার শহীদী মর্যাদা, চান রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। স্বাধীনতা সংগ্রামে ক্যান্টনমেন্ট দখল করার মত দুঃসাহসিক অভিযানে শাহাদত বরণকারী হাজার হাজার মানুষের আত্মত্যাগের এ দিনটিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালন করার দাবি আন্দোলনের অন্যতম নেতা মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান মাষ্টারের।
রংপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু বলেন, চুড়ান্ত তালিকা তৈরিসহ শহীদের মর্যাদা দেওয়ার জন্য জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বহুবার যোগাযোগ করা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। শহীদ পরিবারগুলোর দাবি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও দিবসকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করার পদক্ষেপ নেওয়া হোক এবং তাদের শহীদ পরিবারের মর্যাদা দেওয়া হোক।