কুলাউড়ার নারী কৃষক জোছনা বেগমের সাফল্য

মৌলভীবাজার থেকে আজিজুল ইসলাম: দক্ষিণ এশিয়ার ৩০ জন নারী কৃষকের অন্যতম কুলাউড়া উপজেলার জোছনা বেগম। সমাজের নানা বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে স্বামীর সাথে মাঠে কৃষি কাজ করে দারিদ্র্যকে জয় করে সে এখন স্বাবলম্বী।

উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের আকিলপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের স্ত্রী নারী কৃষক জোছনা বেগম (৩৬)। ৩ সন্তানসহ পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫জন। নিজের ১০ শতক জমির উপর জীর্ণঘরে বসতি জোছনা বেগমের পরিবারের। নিজেদের ক্ষেতের জমি না থাকায় জোছনা বেগমের স্বামী আব্দুর রশিদ মানুষের জমিতে বর্গা চাষ করে পরিবারের অন্নের যোগাড় করেন।

Josna 5
মাঠে কাজ করছেন জোছনা বেগম

দারিদ্র্যের কষাঘাতে অন্নের ব্যবস্থা করাই যেখানে দুষ্কর, সেখানে ৩ সন্তানের লেখাপড়ার খরচ যোগান দেওয়ার চিন্তায় আব্দুর রশিদ যখন মুচড়ে পড়েন তখন পাশে দাঁড়ান জোছনা বেগম। তার প্রেরণা হয়ে আসে প্রচেস্টা নামক বেসরকারি সংস্থা। সেই সংস্থার বিকল্প জীবিকায়ন প্রকল্পে উদ্বুদ্ধ হয়ে জোছনা বেগম মাঠে কৃষি কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় সামাজিক কুসংস্কার। একজন নারী পুরুষের সাথে মাঠে কাজ করবে, এলাকার মানুষ কি বলবে? -এই চিন্তা থেকে আব্দুর রশিদও স্ত্রী জোছনা বেগমকে নিরুৎসাহিত করেন। কিন্তু জোছনা বেগম সকল বাঁধা উপেক্ষা করে শুরু করেন কৃষি কাজ।

জোছনা বেগম জানান, প্রথম বছর রামাই ক্ষেত (বরবটি চাষ) করি। এতে জমির মালিকের টাকা পরিশোধ করে এক মৌসুমে লাভ হয় ১৫ হাজার টাকার মত। বরবটির পাশাপাশি শসা চাষ করেছেন। গার্হস্থ্যকাজের পাশাপাশি করেন পশুপালন। তাকে এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয় বেসরকারি সংস্থা প্রচেস্টা। এখন কৃষি কাজ থেকে তিনি যে আয় করেন, তাতে সন্তানের পড়ালেখার ব্যয় মিটিয়ে সংসার পরিচালনায় অবদান রাখতে পারেন।

জোছনা বেগম আরও জানান, তার স্বামী মাঠে কাজ করতে প্রথমে বাঁধা দিলেও এখন তিনি বুঝতে পেরেছেন মাঠে কাজ করা খারাপ কিছু নয়। ফলে আমার জন্য মাঠে কাজ করা এখন অনেক সহজ হয়েছে। স্বামীর সাথে পরামর্শ করে আগামীতে কৃষি কাজের পরিধি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে তার। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে উঠে কিভাবে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব সেই পরামর্শটা বেশি কাজে লেগেছে। স্বামীর কৃষি কাজে ভাল বীজ সংরক্ষণ করে দেন জোছনা বেগম। পরিবেশবান্ধব চাষাবাদে আগ্রহী করায় কৃষি কাজেও এসেছে সাফল্য।

বেসরকারি সংস্থা অক্সফাম ‘দক্ষিণ এশিয়ার নারী কৃষক ফোরাম’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ৫ মার্চ অংশ নেন জোছনা বেগম। সেখানে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভুটান, ভারত, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ ও নেপালের ৩০ জন নারী কৃষক তাদের সংগ্রাম ও সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। এদিকে গত ৮ মার্চ মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন আয়োজিত আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠানে আলোচনা সভায় জোছনা বেগমকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেখানেও জোছনা বেগম নিজের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন।