মৌলভীবাজার থেকে আজিজুল ইসলাম: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার রাউৎগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে তরমুজ চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। এ বছর তরমুজের ব্যাপক ফলন হওয়ায় কৃষকরাও খুশি।
শখের বসে ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের আপ্তাব মিয়া তরমুজ চাষ শুরু করেন ২০১৩ সালে। প্রথমবার ফলন বেশি পাওয়ায় তিনি তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেন। টানা ৩ বছর থেকে তরমুজ চাষ করে যাচ্ছেন। তরমুজ চাষ করে তিনি এখন আর্থিকভাবেও সাবলম্বী। তার দেখাদেখি তরমুজ চাষে এগিয়ে এসেছেন ভবানীপুরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের কৃষকরা। গত ২ বছর থেকে ১০-১২জন কৃষক নিয়মিত তরমুজ চাষ করছেন। প্রতি বছরই এ সংখ্যা বাড়ছে।
সরেজমিনে রাউৎগাঁও ইউনিয়নের ভবানীপুর, উত্তর নর্তন, ভাটুৎগ্রাম, মুকুন্দপুর ও কৌলা এলাকায় গেলে দেখা যায়, ঢাকা-সিলেট রেললাইনের পাশেই জমির পর জমি সবুজ সমারোহ। সবুজ পাতা ভেদ করে উঁকি দিচ্ছে একের পর এক তরমুজ। না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না যে কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শুধু তরমুজ চাষ ক্ষেত।
কৃষক আপ্তাব মিয়া জানান, ২০১৩ সালে প্রথম শখ করে এ অঞ্চলে তরমুজ চাষ শুরু করি। প্রথম বছরই বেশ সাফল্য পাই । সেই থেকে আমার তরমুজ চাষের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। তার এ সাফল্য দেখে বর্তমানে বিভিন্ন গ্রামের বেশ কয়েকজন কৃষক তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেন। এবছর রাউৎগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার উদ্যোগী চাষী তুহিনুল ইসলাম ও আবেদুর রহমান মিলে ২ একর, খোরশেদ মিয়া ও রহমত মিয়া ১ একর, জিবলু মিয়া ১ একর, জানু মিয়া ১ একর, কয়ছর মিয়া ১ একর ও আলমগীর হোসেন ৫০ শতক জমিতে তরমুজ চাষ করে সফল হয়েছেন।
তরমুজ চাষি তুহিন ও আবেদ জানান, এবার তাদের বাম্পার ফলন হয়েছে। তরমুজ চাষ করতে গিয়ে এ পর্যন্ত তাদের প্রায় ৮০ হাজার টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। তবে তারা ইতিমধ্যে প্রায় ৭০-৮০ হাজার টাকার মতো তরমুজ বিক্রি করে ফেলেছেন। এপ্রিল ও মে মাস পর্যন্ত তরমুজ জমিতে থাকবে। তখন প্রচণ্ড গরম থাকবে বলে এই ফল দ্বিগুণ দামে বিক্রি করা যাবে। এবার কয়েক লাখ টাকা আয় হবে বলে তারা আশাবাদী।
আরেক তরমুজ চাষি রহমত মিয়া জানান, জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি তরমুজের বীজ বপন করতে হয় এবং মে মাস পর্যন্ত ফল গাছে আসে। এ কারণে এক মাসের মধ্যে তরমুজ বিক্রি করে কয়েক লাখ টাকা তিনি আয় করতে পারবেন বলে আশাবাদী। আরেক তরমুজ চাষি লালা মিয়া জানান, তার ক্ষেতে যেভাবে তরমুজ এসেছে তা সঠিকভাবে বিক্রি করতে পারলে, কয়েক লাখ টাকা আয় হবে। যদি এই সময়ে শিলাবৃষ্টি হয়, তাহলে তরমুজ চাষিদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
তরমুজ চাষিরা আরও জানান, বীজ বপন থেকে শুরু করে ফসল ধরার আগ পর্যন্ত প্রায় ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। তবে ফসল নষ্ট না হলে বা রোগবালাই না হলে চাষিরা বেশ লাভবান হবেন।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, রাউৎগাঁও অঞ্চলে তরমুজ চাষ করে কৃষকরা ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। তারা বীজ রোপণের আগে কৃষি বিভাগের সাথে যোগাযোগ করলে কৃষি বিভাগের লোকজন তাদের কীভাবে বীজ রোপণ করতে হয়, সে সম্পর্কে ধারণা দিতে পারতো। তবে এখন রোগবালাই সম্পর্কে ধারণা, পোকা আক্রমণ করলে কী করতে হবে এবং ফসলের চাষ সম্পর্কে নানা পরামর্শ তাদের দেওয়া হচ্ছে।