নিরাপত্তা হেফাজত থেকে ফিরে দ্বিতীয়বার অপহৃত হলো স্কুলছাত্রী

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) থেকে মিলন কর্মকার রাজু: একমাত্র মেয়েকে উদ্ধারের জন্য আবারও প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুড়ছে অসহায় বাবা-মা মো. নুরুল ইসলাম ও রাজিয়া সুলতানা। বরিশাল নিরাপত্তা হেফাজত থেকে জিম্মায় এনে একদিনও মেয়ে সুমনা ইসলাম নওরিনকে (১৫) কাছে রাখতে পারেনি তারা। ১০ মার্চ সন্ধ্যায় মায়ের পাশে ঘুমন্ত অবস্থায় নওরিনকে দ্বিতীয়বার অপহরণ করে সুজন হাওলাদারের (২২) নেতৃত্বে ৫/৭ যুবক। পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহরের নাচনাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় কলাপাড়া উপজেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করলেও ঘটনার ২৪ দিনেও পুলিশ নওরিনকে উদ্ধার কিংবা অপহরণকারীদের গ্রেফতার করতে পারেনি।

শুক্রবার সকালে কলাপাড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে মো. নুরুল ইসলাম ও রাজিয়া সুলতানা দম্পতি নওরিন অপহরণের সেই রাতের ঘটনার বর্ণনা দেন।

নওরিনের মা বলেন, ১০ মার্চ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যার পর মেয়েকে পাশে নিয়ে তিনি ও তার বোন মুন্নী বেগম এক বিছানায় ঘুমিয়ে ছিলেন। পাশের ঘরে বোনের ছেলে নবম শ্রেণীর ছাত্র রাশেদ পড়ছিল। ঘরের সামনের দরজা খোলা থাকায় সুজনের নেতৃত্বে ৫/৭ যুবক আকস্মিক ঘরে প্রবেশ করে তাদের কাছ থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় নওরিনকে।

কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, ঘটনার একদিন আগে (৮মার্চ) নওরিনকে বরিশাল নিরাপত্তা হেফাজত থেকে আদালতের মাধ্যমে তাদের জিম্মায় নিয়ে আসেন। কিন্তু তারা আবারও তাকে অপহরণ করে।

কলাপাড়ার খেপুপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী নওরিনকে ৫ ফেব্রুয়ারি সকালে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার পথে প্রথম দফায় অপহরণ করা হয় সুজনের নেতৃত্বে। এ ঘটনায় ৬ ফেব্রুয়ারি সুজন, চা বিক্রেতা হারুন হাওলাদারসহ তার তিন ছেলে সুজন হাওলাদার, রাসেল হাওলাদার, রিয়াজ হাওলাদার, সোহেল হাওলাদার এবং একই এলাকার মোতাহার ফকির ও মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে কলাপাড়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ সুজনের পিতা হারুন হাওলাদারকে চাপপ্রয়োগ করলে অপহরণের ছয় দিন পর ১১ ফেব্রুয়ারি অপহরণকারীরা নওরিনকে কলাপাড়া-পটুয়াখালী সড়কে ফেলে রেখে পালিয়ে গেলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে।

আদালতের নির্দেশে পুলিশ ১২ ফেব্রুয়ারি নওরিনের বয়স নির্ধারণের জন্য পটুয়াখালী হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে তাকে বরিশাল নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠিয়ে দেয়।

মেডিকেল রিপোর্টে নওরিনের বয়স ১৩/১৪ বছর বলে প্রতিবেদন দিলে ৮ মার্চ আদালত নওরিনকে তার অভিভাবকদের জিম্মায় দেয়। কিন্তু ১০ মার্চ তাকে আবার অপহরণ করা হয়।

নওরিনের পিতা নুরুল ইসলামের আর্তি তার একমাত্র মেয়ের এখনও বিয়ের বয়স হয়নি। কিন্তু তিনি শুনেছেন তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সুজন তাকে বিয়ে করেছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় ১৯ মার্চ কলাপাড়া জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। আদালত কলাপাড়া থানা পুলিশকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিলেও পুলিশ তাকে উদ্ধার করতে পারেনি। বরং অপহরণকারীরা তাকেসহ তার পরিবারের সদস্যদের জীবননাশের হুমকি দিচ্ছে  এবং পুলিশের সাথে অপহরণকারীদের সখ্যতা আছে বলে তিনি লিখিত অভিযোগ করেন।
এ ব্যাপারে কলাপাড়া সহকারী পুলিশ সুপার মো. মইনুল হক সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ নওরিনকে উদ্ধারের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। পুলিশের বিরুদ্ধে তাদের  অভিযোগ মিথ্যা বলে তিনি জানান।