বরিশাল থেকে এম.মিরাজ হোসাইন: বরিশাল নগরবাসীর সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে নির্মিত সারফেজ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। জুন মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে দু’টি ট্রিটমেন্ট প্লান্টের একটি চালু করা হবে। বরিশাল নগরীর বেলতলায় ১৯ কোটি টাকা ব্যায়ে স্থাপিত এই শোধনাগার থেকে দৈনিক তিন কোটি ২০ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানি উৎপাদিত হবে। এতে বরিশালে আর সুপেয় পানির সংকট থাকবে না বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে পানি সরবরাহের মূল লাইন স্থাপনের কাজ শেষের পথে। মে মাসের মধ্যে সকল কাজ সম্পন্ন হবে।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের জন্য এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। বিসিসি’র পানি শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী মনিরুল ইসলাম স্বপন বলেন, ৫৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বরিশাল নগরীর তিন লাখ ২৮ হাজার ২৭৮জন বাসিন্দার পানির চাহিদা মেটাতে গভীর নলকূপ রয়েছে এক হাজার ২৪০টি। নগরীতে মোট পানির চাহিদা দৈনিক এক কোটি ৩০ লাখ গ্যালন। এর বিপরীতে বিসিসি সরবরাহ করছে ৫০ থেকে ৫৫ লাখ গ্যালন।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বরিশালে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২৫ বছর পর নগরীর টিউবওয়েলে আর পানি উঠবে না। তাই সিলেট ও বরিশাল মহানগরীতে পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় বরিশাল নগরীতে দুইটি সারফেজ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করছে সরকার।
বরিশাল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের স্টিমেটর মোঃ আব্দুল মালেক জানান, ১৯ কোটি টাকা ব্যায়ে ২০১২ সালে নগরীর বেলতলায় সারফেজ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ও ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৩ সালে রূপাতলীতে অপর একটি প্লান্ট স্থাপনের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এ জন্য ছয় একর জমিও অধিগ্রহণ করা হয়। বেলতলার প্লান্টের ৯৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে এবং রুপাতলীর প্লান্টের ৪০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বেলতলার প্লান্টটির শুধুমাত্র ফিল্টারের কাজ বাকি রয়েছে। জুন মাসে এটি চালু করা হবে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আহসান হাবিব কামাল জানান, নগরবাসীর পানির চাহিদা মেটাতে আগামী দুই মাসের মধ্যে একটি প্লান্ট উদ্বোধন করা হবে। এ প্লান্ট চালু হলে নগরবাসীর আর বিশুদ্ধ পানির অভাব থাকবে না।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নিবার্হী প্রকৌশলী মোঃ শহীদুল ইসলাম জানান, ভু-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে বেলতলা ও রূপাতলীতে সারফেজ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করা হচ্ছে। এর একটির প্রায় ৯৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। প্রতিটি প্লান্ট থেকে দৈনিক ৩ কোটি ২০ লাখ লিটার বিশুব্ধ পানি উৎপাদন করা যাবে। জুন মাসের মধ্যে একটি প্লান্ট চালু করা যাবে বলে তিনিও জানান। অপর প্লান্টটিও এ বছরই চালু করা যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কনজ্যুমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর বরিশাল জেলা সাধারণ সম্পাদক রনজিৎ দত্ত বলেন, সারফেজ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট চালু হলে প্রকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা পাবে। এ প্লান্ট চালু হলে আর্সেনিক ও আয়রন থেকেও রক্ষা পাবে নগরবাসী। এ ব্যাপারে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিখিল চন্দ্র দাস জানান, সারফেজ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বিসিসি’র জন্য একটি বড় ধরনের সাফল্য। নগরবাসীর বিশুব্ধ পানির চাহিদা এর ফলে পুরোটাই মিটে যাবে।