ঝিনাইদহ থেকে জাহিদুর রহমান তারিক: ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আকরাম হোসেন খান অবিতরণকৃত বই বিক্রির সরকারি অনুমোদন না থাকলেও ছুটির দিনে বই বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়লেন। আর এ ঘটনা জানাজানি হওয়ায় মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা পর্যায়ের মাধ্যমিক স্তরের বই বিতরণ ও অবিতরণকৃত বই বিক্রি কমিটির সভাপতি ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেছেন, অবিতরণকৃত বই থাকলে তা সরকারি নিয়মনীতি মেনেই বিক্রি করার জন্য তিনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের প্রস্তাবে পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে বই বিক্রির বিষয়টি তিনি জানেন না বলে জানান। শৈলকুপার কলেজপাড়ার কয়েকজন যুবক জানান, শুক্রবার ছুটির দিনে কুষ্টিয়ার একজন হকার দুই বস্তা বই নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসার সামনে দিয়ে যাবার সময় তার আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় তারা হকারকে কোথা থেকে বই আনা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আকরাম হোসেন খান প্রতি কেজি ১০ টাকা দরে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে জানান। ওই কর্মকর্তাকে তিনি অগ্রিম ৯৫০ টাকা দিয়েছেন বলেও জানান।
স্থানীয় ভাংড়ি ব্যবসায়ী গালিমের দোকানে বস্তাগুলো খুললে তারা ২০১৩, ২০১৪ ও চলতি ২০১৫ শিক্ষাবর্ষের বইও ওইসব বস্তায় দেখতে পান। তবে অধিকাংশ বই ২০১৫ শিক্ষাবর্ষের ছিল বলে তারা জানান। বইক্রেতা হকার বইসহ ধরাপড়ার বিষয়টি সাথে সাথে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আকরাম হোসেন খানকে মোবোইল ফোনে জানান।
এলাকাবাসী ভ্যানচালককে বেঁধে ফেললে শিক্ষা অফিসার তাকে ছাড়িয়ে নিতে চাপ দেন। শিক্ষা অফিসার বইগুলো ওজন করার জন্যই পাঠিয়েছিলেন বলে বোঝাতে চেষ্টা করেন। ঝগড়া ও হাতাহাতির একপর্যায়ে তিনি হকারকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। স্থানীয় যুবক কামাল ড্রাইভার ও এলাকাবাসী আসলাম জানান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আকরাম হোসেন খান হকারকে ছাড়িয়ে নিতে ৫শ’ টাকার একটি নোট দিলে তারা তা প্রত্যাখ্যান করেন। কামাল জানান, ওইসব বইয়ের অধিকাংশই ছিল ২০১৫ শিক্ষাবর্ষের।
বই বিতরণ ও অবিতরণকৃত বই বিক্রি কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া এতো বই শুক্রবার ছুটির দিনে গোপনে ওজনে বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আকরাম হোসেন খান জানান, সংশ্লিষ্ট কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মৌখিক পরামর্শে তিনি বইগুলো বিক্রি করতে ওজনের জন্য পাঠিয়েছিলেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা পর্যায়ের মাধ্যমিক স্তরের বই বিতরণ ও অবিতরণকৃত বই বিক্রি কমিটির সভাপতি ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী রওশন ইসলাম জানান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আকরাম হোসেন খান তাকে উঁইপোকায় কাটা ও নষ্ট কয়েকখানা বই বিক্রির কথা জানালে তিনি অবিতরণকৃত বা নষ্ট বই থাকলে তা সরকারি নিয়মনীতি মেনেই বিক্রি করার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আকরাম হোসেন খান বই বিক্রি করে দিয়েছেন বিষয়টি তার জানা ছিল না বলে তিনি জানেন।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আমজাদ হোসেনের সাথে আলাপ করলে তিনি জানান, ইতিপূর্বে সরকার ২০১০, ২০১১, ও ২০১২ শিক্ষাবর্ষের বই বিক্রির অনুমোদন দানের পর নতুন করে কোনও অনুমোদন দেয়নি কর্তৃপক্ষ। ২০১৩ ও ২০১৪ শিক্ষাবর্ষের বই অপরিবর্তিত থাকায় তা চলতি ২০১৫ শিক্ষাবর্ষেও পঠিত হচ্ছে। তাছাড়া, কোনও উপজেলায় চলতি শিক্ষাবর্ষের বইয়ের চাহিদা থাকলে তা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে সংশ্লিষ্ট জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস তা বিতরণ করবে। এক্ষেত্রে অবিতরণকৃত বই বিক্রির কোনও সুযোগ নেই।
শৈলকুপা উপজেলায় ২০১৩ ও ২০১৪ শিক্ষাবর্ষের কোন বই অবিতরণকৃত আছে তা তাদের অফিসকে জানানো হয়নি বলেও তিনি জানান। মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক জাকির হোসেনের সাথে এ বিষয়ে কথা বললে তিনি জানান, নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ২০১৩, ২০১৪ ও চলতি ২০১৫ শিক্ষাবর্ষের কোনও বই চলতি শিক্ষাবর্ষ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিক্রির অনুমোদনের প্রশ্নই আসেনা। কোনও কর্মকর্তা এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।