কলাপাড়া(পটুয়াখালী) থেকে মিলন কর্মকার রাজু: ছাদ ও দেয়াল থেকে খসে পড়ছে পলেস্তরা। প্রতিটি রুমের দেয়ালে বড় বড় ফাঁটল। দ্বিতল ভবনের প্রতিটি সিঁড়ি ও কার্নিস ভেঙ্গে গেছে। নেই দরজা-জানালা। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধুলাসার ইউনিয়নের নতুন পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টারের পরিত্যক্ত ভবনের চিত্র এটি। কিন্তু এ বিধ্বস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিতেই চলে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও এলাকার শতশত ছেলে-মেয়েদের খেলাধুলা। এ কারণে এ বর্ষা মৌসুমে যে কোনও সময় ভবনটি বিধ্বস্ত হয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশংকায় উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী।
১৯৮৫ সালে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে এলাকার মানুষের নিরাপত্তার জন্য এ সাইক্লোন সেল্টারটি নির্মাণ করা হয়। ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত নতুনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছিল এ ভবনেই। ২০১০ সালে ক্লাস চলাকালীন অবস্থায় ছাদের পলেস্তরা ভেঙ্গে পড়ায় এ ভকনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। বিদ্যালয়ের ক্লাস পরিচালনার জন্য এ ভবনের পাশেই নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। সেখানেও পর্যাপ্ত ক্লাস রুম নেই।
কলাপাড়ায় এরকম অন্তত ৯টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে ১৮৫ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। কিন্তু তাদের মাত্র দুটি রুমে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস নিতে হয়। বর্তমানে তারা একটি কক্ষে দুটি ক্লাস নিচ্ছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের বসার জায়গা সংকুলান না হওয়ায় মেঝেতেও ক্লাস নিচ্ছেন। শিক্ষকদের বসার কোন কক্ষ নেই। প্রায় চার বছর আগে তাদের পুরাতন ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও এখন পর্যন্ত নতুন ভবন নির্মাণ না হওয়ায় তারা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কয়েক মিনিট পরপরই একটু জোড়ে বাতাস বইলেই ভবনের বিভিন্ন স্থান থেকে পলেস্তরা খঁসে পড়ছে। কিন্তু সেই ভবনের নিচে ঘুরে বেড়াচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা। ক্লাস ছুটি কিংবা অবসর সময়ে এ ভবনের ছাঁদে উঠে, রুমের মধ্যে বসে ছাত্র-ছাত্রীরা খেলাধুলা করে। স্কুল ছুটির পরও চলে খেলাধুলা। নতুনপাড়া গ্রামে খেলার মাঠ না থাকায় এ স্কুল ভবনের সামনে ও এই পরিত্যক্ত বিল্ডিংই এখন ছাত্র-ছাত্রীদের একমাত্র খেলার জায়গা।
স্কুল ছাত্র লিমন, আল ইমরান, নাঈম, সোহেল জানায়, তারা এই বিল্ডিংয়ের ছাঁদে উঠে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা করে। বর্ষা হলে রুমের মধ্যে খেলাধুলা করে। মাঝে মধ্যেই ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ে জানালেও তারা এখানেই খেলাধুলা করে।
এলাকার একাধিক অভিভাবক জানান, গত দুই বছরে অন্তত ২০/২৫ জন শিশুর মাথা ও শরীরে ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ে আহত হয়েছে। কিন্তু বাচ্চারা না বুঝে তারপরও ওই বিল্ডিংয়েই খেলতে যায়। তারা বলেন কতক্ষণ আর শিশুদের চোখে চোখে রাখা যায়। তাদের দাবি ভবনটি ভেঙ্গে নতুন ভবন করা হোক।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আলতাফ হোসেন বলেন, বর্তমানে ওই বিল্ডিংটি খুবই ঝুঁকিপর্ণ। তাছাড়া তাদের নতুন ভবন ও দরকার। কারণ বিদ্যালয়ে ১৮৫ ছাত্র-ছাত্রীর জন্য মাত্র দুটি রুম। এতে ক্লাস করতে তারা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। আর প্রায়ই এ ভবনের ছাদের ও দেয়ালের পলেস্তরা খসে পড়ে ছাত্র-ছাত্রীরা আহত হয় বলে তিনি জানান।
কলাপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন জানান, তারা প্রায় চার বছর আগে ওই বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টারটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছেন। উপজেলার আরও কিছু পরিত্যক্ত ভবন রয়েছে। যেগুলো ভেঙ্গে ফেলার অনুমতি চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সরকারি অনুমোদন হলেই তারা পরিত্যক্ত ভবনগুলো ভেঙ্গে ফেলবেন।