ঝিনাইদহ থেকে জাহিদুর রহমান তারিক: এক সময়ের খরস্রোতা কপোতাক্ষ নদে এখন ধান চাষ করা হচ্ছে। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং ব্যহত হচ্ছে নদীপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
মহেশপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে ভৈরব, কপোতাক্ষ, ইছামতি, বেতনা, কোদলাসহ প্রভৃতি নদ-নদী প্রবাহিত ছিল। কালের বিবর্তনে আজ সব হারিয়ে গেছে। এক সময় ইংরেজ শাসক গোষ্ঠী ও জমিদারদের মোটর লঞ্চ নদী বক্ষে সিটি বাজিয়ে বা ভেঁপু বাজিয়ে মুখরিত করে করত। অসংখ্য জলযান ও মাঝি মাল্লাদের কোলাহল ছিল এই নদীগুলিতে। ভারতের পশ্চিম বঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নদী পথে ব্যবসা করতে আসত ব্যবসায়ীরা।
এছাড়া ঢাকা, ফরিদপুর, বরিশাল অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা এসে ২/৩ মাস অবস্থান করে মালামাল বিক্রি করে এখান থেকে ধান, চালসহ চাহিদা মোতাবেক জিনিসপত্র নিয়ে চলে যেত। উপজেলার প্রধান নদ এখন স্রোতহীন, পানি শূণ্য। মানুষ এখন নিজেদের মতো করে দখল করে ধান চাষ করছে। এলাকার প্রভাবশালী ভূমি দস্যুরা নদ দখল করে পুকুর খনন করেছে।
ভারতের গঙ্গা নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করে পদ্মা নদী নাম ধারণ করে। এর শাখা নদী মাথাভাঙ্গা, গড়াই এবং গড়াই এর শাখা নদ ভৈরব বা কপোতাক্ষ। মহেশপুরের এস বি কে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ বলেন, কপোতাক্ষের সেই যৌবন অনেক আগেই বিলীন হয়ে গেছে। এখন দখলদাররে ধান চাষ হয় নদের বুকে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগ নিলেও কোনও সুরাহা হয়নি।
সামন্তা গ্রামের বয়োবৃদ্ধ নজির শেখ বলেন, ছোট কালে এই নদ দিয়ে কলকাতা গেছি। আর এখন এখানে একটা ডিঙ্গি নৌকাও চলাচল করতে পারে না। এলাকার মানুষ নদ দখল করে চাষাবাদ করে। একই গ্রামের কৃষক মানিক হোসেন বলেন, এই নদ থেকে মাছ ধরে আমাদের সংসার চলতো। বাবা পাশাপশি চাষাবাদ করতো। বাবা মারা গেছে সেই সাথে নদীর সেই মাছও আর কপালে জোটে না। বড় বড় লোকেরা এখন নদের মালিক।
এ ব্যাপারে মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসিমা খাতুন বলেন, কপোতাক্ষ নদকে দখলমুক্ত করতে ইতিমধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেসব দখলদার রয়েছে তাদের নোটিশ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। অবিলম্বে এ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। ভরাট হওয়া নদ-নদীগুলি পুনরায় খনন এবং অবৈধ বাঁধ ও পুকুর খনন বন্ধ করে পানি প্রবাহ সৃষ্টি করলে আবার পুরানো রূপে ফিরে আনা করা সম্ভব। সেই সাথে পরিবেশ বিপর্যয় থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে।