ধনবাড়িতে জীনের বাদশা সেজে বর্বরতা, শিশু বায়েজীদ মৃত্যু শয্যায়

মধুপুর (টাঙ্গাইল) থেকে আব্দুল্লাহ আবু এহসান: জীনের বাদশার অলৌকিক শক্তিতে পাঁচ কোটি টাকা এবং সুন্দরী পুত্রবধূ পাওয়ার লোভে চার বছরের শিশু  বায়েজীদকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে। বর্বর নির্যাতনের শিকার পঙ্গু বায়েজীদকে নিয়ে মা শাহীদা বেগম এখন মধুপুর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের বেডে বসে চোখের  জলে ভাসছেন।

gopal pic 11.04
বর্বর নির্যাতনের শিকার পঙ্গু বায়েজীদকে নিয়ে মা শাহীদা বেগম এখন মধুপুর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে

জানা যায়, ধনবাড়ি উপজেলার বলিয়াবাড়ীর রিকসা চালক হাসান আলীর মেয়ে শাহীদা বেগমের বিয়ে হয় একই গ্রামের আব্দুল হাইয়ের সাথে। আগের স্ত্রী তিন সন্তান রেখে মারা গেলে দ্বিতীয় বিয়ে করে সে। টাঙ্গাইল পৌরসভার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আব্দুল হাই জেলা শহরের ঈদগাঁ মাঠ এলাকায় ভাড়া বাসায় সপরিবারে বাস করে। প্রথম পক্ষের বড় ছেলে শামীম হোসেন, সৎমা ও ভাইবোনের সাথে থেকে টেক্সটাইল কলেজে লেখাপড়া করে। দুই মাস আগে পরিচয় ঘটে ধনবাড়ি পৌরসভার ছত্রপুর চরভাতকুড়া গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে জীনের বাদশা সবুজ মিয়া ওরফে সবুজ পরীর সাথে। এক পর্যায়ে সবুজ পরী শামীমের পরিবারকে অলৌকিকভাবে পাঁচ কোটি টাকা এবং মহিলা জীনের সাথে বিয়ে করানোর প্রস্তাব দেয়।

এজন্য গত ৬ মার্চ রাতে বাসায় শামীমকে গায়ে হলুদ দিয়ে সাজানো হয়। সবুজ পরী শামীমকে সারা রাত যন্ত্রমন্ত্র পড়ায়। পর দিন শামীমের সৎ মা শাহীদাকে নির্দেশ দেওয়া হয় সপরিবারে এক সপ্তাহ ভিক্ষা করার জন্য। জীনকে বধূ হিসাবে এবং ৫ কোটি টাকার লোভে পরিবারের সকলে মিলে টাঙ্গাইল শহরে এক সপ্তাহ ভিক্ষে করে বেড়ায়। প্রত্যেক দিন আদায় হওয়া ভিক্ষার হাজার-বারো’শ টাকা সবুজ পরীর হাতে তুলে দেওয়া হতো। এর পর সবুজ আরো ২০ হাজার টাকা লাগবে বলে জানায়। শাহীদা বেগম রিকশা চালক বাবার কাছে এই টাকা চাইলে তিনি সুদে ২০ হাজার টাকা জুগিয়ে দেন।

এরপর ৭০ ঘাটের জল। পাঁচশ প্রজাতির বৃক্ষ পাতা সংগ্রহ করানো হয়। সর্বশেষে নিষ্ঠুর শর্ত। চার বছরের কচি শিশু বায়েজীদের পুরুষাঙ্গের চামড়া লাগবে। ২০ মার্চ রাতে বায়েজীদের হাতপা ও মুখ বেঁধে তার পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ ব্লেড দিয়ে ছেদন করা হয়। শিশু বায়েজিদ যন্ত্রনায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে। জ্ঞান ফিরলে কান্নাকাটি করলে তার দুটি হাত ও পা ভেঙ্গে দেওয়া হয়। ২ এপ্রিল সবুজ পরী বায়েজীদের শরীরের অন্তত দশ জায়গায় ফুটো করে রক্ত নেয়। এসব দ্রব্য একত্রিত করে আগামী ২০ এপ্রিল কালী সাধন করবে সবুজ। আর সেদিনই মিলবে ৫ কোটি টাকা ও বধূরূপি সুন্দরী মহিলা পরী।

ব্যাপক রক্তক্ষরণ হওয়ায় এবং হাত পা ভেঙ্গে ফেলার যন্ত্রনায় শিশু বায়েজীদ কান্নাকাটি করতে থাকলে তার মুখ কচ টেপ দিয়ে বন্ধ রাখা হয়। শরীরে আগুনের মত জ্বর দেখা দিলে মা শাহীদা বেগম সুযোগ বুঝে বৃহস্পতিবার বায়েজীদকে নিয়ে বাসা থেকে পালিয়ে বাবার বাড়ি আসে। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় বায়েজীদকে মধুপুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মধুপুর হাসপাতালের ক‘জন ডাক্তার জানান, শিশুটির দুটি হাত ও একটি পায়ের গোড়ালি ভেঙ্গে গেছে। কচি পুরুষাঙ্গ ব্লেড দিয়ে কাটায় ক্ষত তৈরি হয়েছে। তার মাথার চামড়া কেটে  রক্ত নেওয়া হয়েছে। এজন্য মাথা ফুলে গেছে। এছাড়াও শরীরের ১২ টি স্থান ফুটো করে রক্ত নেওয়া হয়েছে। এসব স্থানে ইনফেকশন দেখা দিয়েছে। শিশুটির কানে টিশু পেপার ঢুকিয়ে দেওয়ায় সে শুনতে পায়না।

শনিবার এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত তার কান থেকে টিসু পেপার বের করা যায়নি। তার পুরুষাঙ্গ অস্বাভাবিক রকম ফুলে গেছে। শিশুটি এখন হাসপাতাল বেডে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। কথিত পরীর পাশবিক নির্যাতনের মধ্যে শিশুটি কীভাবে বেঁচে রয়েছে তা দেখে চিকিৎসকরা হতবাক হয়ে গেছেন। তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। কিন্তু অর্থাভাবে এবং অপহরণের ভয়ে শিশুটির মা তাকে অন্য কোথাও নিয়ে যেতে চাচ্ছেন না বলে ডাক্তাররা জানান।

বায়েজীদের নানা হাসান আলী অভিযোগ করেন, জীনের বাদশার পাল্লায় পড়ে নাতিটারে পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে। সবুজ আর শামীম মিলে এ কাজ করেছে। টাকার লোভে পড়ে আমার মেয়ে জামাই আব্দুল হাই পশু হয়ে গেছে। থানায় যাতে মামলা না দেই এজন্য নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। সবুজ ও শামীমের সাথে বোন জামাই হাবিবুর রহমান, মাজেদুল এবং মধুপুর উপজেলার ব্রাহ্মনবাড়ি গ্রামের সন্ত্রাসী জুরান সিন্ডিকেট করে জীনের বাদশার নামে নিরীহ মানুষকে হয়রানি এবং টাকা পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে শাহিদা ও তার  বাবার অভিযোগ।