বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে যত দুর্নীতির অভিযোগ

বরিশাল থেকে এম.মিরাজ হোসাইন: বরিশাল কারাগারে রাখা হয়েছে ধারণ ক্ষমতার তিনগুণ আসামি। বন্দিদের জন্য সরকার নির্ধারিত খাবার সরবরাহ নিয়ে রয়েছে নানান অভিযোগ। বিত্তবান বন্দিরা আরাম-আয়েশে দিন কাটালেও গরিব ও অসহায় কারাবন্দিদের পদে পদে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

বৃটিশ আমলে স্থাপিত বরিশালের এই কারাগারে আসামির ধারণ ক্ষমতা ৪৬৫ জন। বর্তমানে সেখানে আসামি রাখা হচ্ছে গড়ে ১২শ’। বরিশাল বিভাগীয় শহরে রূপান্তরিত হওয়ার পর শুধু কারাগারের সাইনবোর্ড পরিবর্তন হয়ে নাম হয়েছে কেন্দ্রীয় কারাগার। কিন্তু অবকাঠামো পরিবর্তন কিংবা আধুনিক কোনও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়নি। সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েকজন বন্দি অভিযোগ করেন, বন্দিদের জন্য সরকারি বরাদ্দের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় থাকা চাল, ডাল, তেল, মাছ থেকে শুরু সকল ক্ষেত্রেই অনিয়ম করা হচ্ছে। আর এই খাবারের টাকা লোপাট করে কতিপয় কারা কর্তৃপক্ষ ও সরবরাহকারী ঠিকাদাররা বিত্তবৈভবের মালিক হচ্ছে।

কারাগার সূত্র জানায়, প্রতি বন্দির জন্য প্রতি বেলায় ২৯১ দশমিক ৬০ গ্রাম চাল বরাদ্দ থাকলেও দেওয়া হয় ১শ’ গ্রাম। ১৪৫ দশমিক ৪০ গ্রাম ডালের পরিবর্তে দেওয়া হয় মাত্র ৫০ গ্রাম। গড়ে দৈনিক ৭০ থেকে ৮০ কেজি চাল ও ১৫ থেকে ১৬ কেজি ডাল কম সরবরাহ করে সেই টাকা ভাগাভাগি করে আত্মসাৎ করা হয়। একেকজন বন্দিকে দৈনিক একবেলা ৩৬ গ্রাম মাছ দেওয়ার কথা থাকলেও নামেমাত্র ১৫ গ্রাম মাছ দেওয়া হয়। অধিকাংশ সময় পঁচা ও বাসি মাছ-মাংস সরবরাহ করায় তা বন্দিরা খেতে পারে না।

সরকারি বরাদ্দের বাইরে কারাগারের ভিতরে থাকা দু’টি কেন্টিন থেকে বন্দিদের খাবার ক্রয় করে খাওয়ার নিয়ম থাকলেও তার দাম কয়েকগুণ। ফলে গরিব-অসহায় বন্দিরা ওই কেন্টিন থেকে খাবার ক্রয় করে খেতে পারেন না। কেন্টিন থেকেও কারা কর্তৃপক্ষ মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ২৫ টাকার কেক কারাগারের কেন্টিনে বিক্রি হয় ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। মাছ-মাংস প্রতি পিস বাইরের হোটেল-রেস্টুরেন্টের চেয়ে ১৫-২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কারা কেন্টিনে এক হালি কলা বিক্রি হয় ৩২ টাকায়। কেন্টিনের দায়িত্বে থাকা ৭-৮ জন মিলে সেখান থেকে প্রতি মাসে বিপুল টাকা আয় করে।

বন্দিরা জানায়, টাকা থাকলে কারাগারে কোনও অসুবিধা নেই। কারা চিকিৎসককে মাসোহারা দিয়ে সুস্থ বন্দি মাসের পর মাস হাসপাতালে থাকছেন। আবার টাকা না হলে গুরুতর অসুস্থ বৃদ্ধ বন্দিদের গাদাগাদি করে থাকতে হয় সাধারণ ওয়ার্ডে। কিছুদিন পূর্বে ভাষানচরের ইউপি চেয়ারম্যান আমির হোসেন আকন দুর্নীতির মামলায় কারাবন্দি হন। তাকে গুরুতর অসুস্থ দেখিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ পাঠায় শের-ই বাংলা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে। সেখানে বসেই তিনি এলাকার সালিশ ব্যবস্থা পরিচালনা করতে শুরু করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্ধৃতি দিয়ে এই খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর বাধ্য হয়ে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।’ কিন্তু বর্তমানে তিনি কারা অভ্যন্তরে থাকা হাসপাতালে বিলাসী জীবন-যাপন করছেন। এখানে যাদের টাকা-পয়সা আছে তারা বছরের পর বছর কারা হাসপাতালে অসুস্থ রোগী হিসেবে থাকার পাশাপাশি সকল আধুনিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। বঞ্চিত শুধু সাধারণ কয়েদীরা।

এসব বিষয় নিয়ে বরিশালের জেল সুপার সুব্রত কুমার দত্ত’র সাথে আলাপ করলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ভাত ও মাছ কখনই কম দেওয়া হয় না। বন্দিরা যা খেতে পারে তার চেয়েও অতিরিক্ত সরবরাহ করা হয়। কেন্টিন পরিচালনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুসরণ করা হচ্ছে। কখনোই ২৯ গ্রামের নিচে কোনও মাছের টুকরা বন্দিদের দেওয়ার নজির নেই।