চড়কপূজা:পিঠের চামড়ায় বড়শী গেঁথে শূন্যে ঘুরছে মানুষ

বাগেরহাট থেকে বাবুল সরদার: একজন মানুষ দড়িতে ঝুলে শূন্যে ঘুরছে। তার পিঠের চামড়ার সঙ্গে গাঁথা বড় বড় দুটি বড়শী। চলছে উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি। বাজছে ঢাক-ঢোল। বাগেরহাটে কচুয়ার রাঢ়িপাড়া শিববাড়ি প্রাঙ্গণে হাজার হাজার মানুষ অপলক তাকিয়ে দেখছে চড়ক পূজার এ দৃশ্য।

Bagerhat Photo -2 (15.04
চড়ক পূজা

বরশিতে ঝুলে থাকা মানুষটি তার সাথে থাকা ফুল-জল, বাতাসা, নকুলদানা ইত্যদি প্রসাদ ছিটিয়ে দিচ্ছেন নিচে ভক্ত-দর্শকদের উদ্দেশ্যে। ভক্তরা তা নিয়ে মহাভক্তি ভরে দেব আদি দেব মহাদেবের নাম জপ করছেন।

চড়ক মেলার জন্য অন্তত ২০-২৫ ফুট লম্বা একটি কাঠ মাঠের মধ্যখানে পোতা হয়। অনেকটা লাঙ্গলের জোয়ালের মত আরেকটি কাঠ এই কাঠের ওপর লম্বালম্বিভাবে বসানো হয়। আর কাঠের মাথায় থাকে মাটি পর্যন্ত এক গাছ লম্বা দড়ি। দড়ির একপ্রান্তে একদল মানুষের শক্ত হাত আর অপর প্রান্তে থাকে ভয়ঙ্কর সুন্দর সেই দৃশ্য। আর এটাই চড়ক মেলার উৎসবের মূল আকর্ষণ।

গত ৬’শ বছর ধরে বাগেরহাটে কচুয়ার রাঢ়িপাড়া শিববাড়ি প্রাঙ্গণে সনাতন ধর্মের এ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পুরনোকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করতে বরাবরের মত এবারও চড়ক উৎসব উপলক্ষে তিন দিনের মেলা বসেছে। ইসকন বাগেরহাটের প্রধান উপদেষ্টা বাবুল সরদারের সভাপতিত্বে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন, সংসদ সদস্য আলহাজ্জ মীর শওকাত আলী বাদশা। বিশেষ অতিথি ছিলেন কচুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এস. এম মাহফুজুর রহমান ও প্রতিবন্ধি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বেবী মোর্শেদা খানম। আরও বক্তব্য দেন মন্দির কমিটির সম্পাদক প্রদীপ বসু সন্তুু, কচুয়ার ওসি শমশের আলী, এ্যাড. অনন্ত বিশ্বাস, পুলিন সাহা, মধুসুধন সাহা, সুভাষ রায় প্রমুখ। বক্তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ বলে উল্লেখ করেন।

চৈত্র সংক্রান্তির উৎসবটি শিববাড়িতে গত ছয়’শ বছর ধরে এভাবেই হাজার হাজার ভক্ত-দর্শণার্থীর অংশ গ্রহণে পালিত হয়ে আসছে। চড়ক উৎসবে আসা বিষ্ণুপদ, দিপালী দাস, আরতি বালা,  বাসুদেব সাহা জানান, প্রায় সপ্তাহখানেক আগে থেকেই চড়ক উৎসবের আয়োজন শুরু হয়। ধর্মানুরাগী সন্ন্যাসীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নৃত্যগীতের মাধ্যমে চড়ক পূজার জন্য ভিক্ষা সংগ্রহ করেন।

এরমধ্যে একদিন চলে উপবাস ও রাতে নিরামিষ ভোজ। চড়ক পূজার দু’দিন আগে হয় শ্মশান পূজা ও গৌরীর বিয়ে। গৌরীর নাচ, গান আর ঢাকের বাদ্যে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে পরদিন হয় কালীনাচ। এরপর শুরু হয় মূল আকর্ষণ শরীরে বড়শি বিধিয়ে শূন্যে ঘোরা। যারা শরীরে বড়শি বিধিয়ে শূন্যে ঘোরেন তাদের ‘হাজরা’  বলা হয়।