বরিশাল থেকে এম.মিরাজ হোসাইন: বরিশাল নগরীর ৩০ গোডাউন হিসেবে পরিচিত কেন্দ্রীয় খাদ্য সংরক্ষণাগার গত ছয় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এখানকার ৩০টি গুদামেই ঝুলছে তালা। কাজ না থাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও অলস সময় পার করছেন। খাদ্য না থাকায় কোনো কোনো গুদাম বেসরকারিভাবেও ভাড়া দেওয়া হয়েছে। নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কেন্দ্রীয় খাদ্য সংরক্ষণাগার ঘুরে দেখা গেছে সুমসাম নীরবতা।
সূত্রমতে, ১৯৬২ সালে প্রায় ২৮ একর জমির ওপর স্থাপিত কেন্দ্রীয় খাদ্য সংরক্ষণাগারের ৩০টি গুদামের বেশির ভাগই তালাবদ্ধ। কয়েকটি গুদাম এরইমধ্যে বেসরকারি সংস্থা, টিসিবিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। ৩০ গোডাউনের বিশাল এলাকা এখন মাদকসেবীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। অযতœ আর অবহেলায় কোনো কোনো গুদাম ব্যবহারেরও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কেন্দ্রীয় খাদ্য সংরক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক বি.এম. সফিকুল ইসলাম বলেন, খাদ্য অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ের সিদ্ধান্তেই ২০০৯ সাল থেকে এখানে খাদ্য সংরক্ষণ হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় খাদ্য সংরক্ষণাগারের ৮২ জনবলের মধ্যে কমর্রত রয়েছেন ৬৩ জন। এরমধ্যে ৩৩ জনই ডেপুটেশনে অন্যত্র কাজ করছেন। অবশিষ্ট ৩০ জনের বর্তমান দায়িত্ব প্রসঙ্গে ব্যবস্থাপক সফিকুল বলেন, গুদামে রক্ষিত কীটনাশক দেখভাল এবং দীর্ঘ বছরের অডিট নিয়ে তারা কাজ করছেন। তিনি আরো বলেন, এটি অকার্যকর হলেও গুরুত্ব অপরিসীম। খাদ্য সরবরাহের চ্যানেল থাকলে এখানে কয়েক হাজার টন খাদ্য সংরক্ষণ করা যেত। বরিশালের হাজার হাজার টন ধান চলে যাচ্ছে উত্তরাঞ্চলে। সেই চাল অধিক দামে আবার বরিশালে আসছে। এ অঞ্চলে ব্যাপকহারে অটোরাইস মিল থাকলে বরিশালের চাল উত্তরাঞ্চল থেকে আনতে হতো না। এমনকি এ সংরক্ষণাগারে খাদ্য থাকলে ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে তা অতি সহজে সরবরাহ করা যেত।
সংরক্ষণাগারের খাদ্য পরিদর্শক মোঃ ইউসুফ আলী জানান, সংরক্ষণাগার যখন চালু ছিল তখন শত শত শ্রমিক এখানে কাজ করেছেন। বর্তমানে কর্মরত একাধিক কর্মচারী জানান, ৩০ গোডাউন হিসেবে পরিচিত এ সংরক্ষণাগারের জৌলুস একটি মহল ধ্বংস করে দিয়েছে। বরিশাল কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত দত্ত বলেন, কেন্দ্রীয় খাদ্য সংরক্ষণাগার কেন্দ্র যদি তালাবদ্ধ থাকে, তবে ধরে নিতে হবে বরিশালে খাদ্যের ঘাটতি রয়েছে। দুর্যোগ মুহুর্তে কোথা থেকে খাদ্য আসবে। তা ছাড়া গ্রাম-গঞ্জে খাদ্য সঠিকভাবে সংরক্ষণ হচ্ছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা দরকার। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ছয় বছর ধরে কেন অচল তা জেলা প্রশাসনের টাস্কফোর্স সভায় জানতে চাওয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।