হাবিপ্রবি’তে সংঘর্ষে নিহত ২ জনের ময়নাতদন্ত শেষ, তদন্ত কমিটি গঠন

দিনাজপুর থেকে রতন সিং: হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত দুই ছাত্রের ময়নাতদন্ত শুক্রবার দুপুরে সম্পন্ন করে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সহিংস ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ঘটনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দায়ী করেছেন জেলা আওয়ামী লীগ। হাবিপ্রবি’র পক্ষ থেকে হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় হাবিপ্রবিতে ছাত্রলীগের সভাপতি ইফতেখারুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক অরুন কান্তি রায় সিটন এবং অপর গ্রুপের আসাদুজ্জামান জেমি ও নাহিদ আহমেদ নয়ন গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংঘর্ষে রিয়েল-অরুন সমর্থিত ২ ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল হাসান মিল্টন (২৬) ও মোঃ জাকারিয়া (২২) নিহত হন। নিহত মিল্টন নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার ভেড়ভেড়ি গ্রামের মাহবুবুর রহমানের পুত্র ও কৃষি অনার্সের ছাত্র এবং নিহত মোঃ জাকারিয়া দিনাজপুর শহরের বড়গুড়গোলার গোলাম মোস্তফার পুত্র ও বিবিএ’র ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভেটেরিনারী অনুষদের নবীণবরণ উৎসব চলাকালীন শহর থেকে ৩টি মাইক্রোবাস করে ছাত্রলীগের রিয়েল গ্রুপের সমর্থকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে হামলা চালায়। এসময় আসাদুজ্জামান জেমি ও নাহিদ আহমেদ নয়ন গ্রুপের সমর্থকেরা উপস্থিত সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে পাল্টা হামলা চালালে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

সংঘর্ষের সময় গুলির শব্দ ও ককটেল বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। রাত সাড়ে ৯টায় মিল্টনকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। প্রতিপক্ষের হামলায় মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত জাকারিয়া ক্যাম্পাসের পানির ট্যাংকির পাশের মাঠে মৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। রাত সাড়ে ১১টায় পুলিশ দিমেক হাসপাতালে জাকারিয়াকে আনলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সংঘর্ষে জিয়া হলের সুপার অধ্যাপক ডাঃ ফজলুল হকসহ ২০ জন আহত হন। গ্রেফতার এড়ানোর জন্য আহত অনেকেই গোপনে বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা যায়।

শুক্রবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে কোতয়ালী থানার এসআই আ স ম নুর, এসআই রাজিব ও এসআই পলাশ নিহত ২ ছাত্রলীগ নেতার লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির পর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। দুপুর ১টায় লাশ ২টি স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মিল্টনের লাশ গ্রামের বাড়ি নীলফামারীতে নিয়ে যাওয়া হয়। জাকারিয়ার নামাজে জানাজা দুপুর পৌনে ৩টায় দিনাজপুর শহরের বড়গুড়গোলায় অনুষ্ঠিত হওয়ার পর দাফনের জন্য তার লাশ গ্রামের বাড়ি খানসামা উপজেলার ভাবকীগ্রামে নেওয়া হয়।

সংঘর্ষে গুরুতর আহত হাবিপ্রবি’র ছাত্রলীগ নেতা জাহিদুর রহমান জাহিদকে (২৩) সকাল ৮টায় বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং রানা (২৪) ও ডলারকে (২২) রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। দিমেক হাসপাতালে গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তি ৬ ছাত্রলীগ নেতা হলেন রিয়ানুল হক (২২), শাওন (২২), বিজন (২৪), নয়ন (২২) ও সামিউল (২১)।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার মোঃ নজিবুর রহমান জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় কৃষি অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. আনিস খানকে আহ্বায়ক ও ছাত্র পরামর্শ বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. শাহাদত হোসেন খানকে সদস্য সচিব করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ২ কার্য দিবসের মধ্যে কমিটিকে লিখিত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১১টা থেকে দেড় টা পর্যন্ত ভিসি প্রফেসর রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে তার বাসভবনে অনুষ্ঠিত জরুরি বৈঠকে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষা ও ক্লাস যথারীতি চলবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়। রেজিষ্ট্রার নজিবুর রহমান বলেন, তিনি বাদী হয়ে কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করবেন। আইন উপদেষ্টা এ্যাড. মাহবুবুর রশিদের সাথে পরামর্শ করে এজাহার লেখা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
পুলিশ সুপার মোঃ রুহুল আমিন জানান, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা না হলেও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইমাম চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিস্ক্রিয়তা, ব্যর্থতা ও উদাসীনতার জন্য এই হত্যাকা- ঘটেছে। তিনি ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীরা যেই হোক তাদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র অভিযোগ করেন, দলীয় কোন্দলের কারণেই এই হত্যাকা- সংঘঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনা সেই দ্বন্দ্বেরই নির্মম পরিণতি বলে উক্ত নেতা মন্তব্য করেন।