মৌলভীবাজার থেকে আজিজুল ইসলাম: ‘ধানের যে অবস্থা কাটিয়া কোন লাভ নাই। এক কিয়ার ধান কাটতে খরচ ১ হাজার আর ধান মিলের ৫-৬ মন। গরুর খরের লাগি এখন ক্ষেতে যাওয়া লাগের।’ শীলা বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত সুনাটিকি গ্রামের কৃষক সমজুল (৪৫) এভাবেই জানালেন তার কষ্টের কথা। গত কয়েকদিনের শিলা বৃষ্টি রাজনগর উপজেলার কাউয়াদীঘি হাওর এবং ফতেহপুর, পাঁচগাঁও, উত্তরভাগ ও মুন্সিবাজার ইউনিয়নের ২৫ টিরও বেশি গ্রামের কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় ৪ হাজার একর পাকা বোরো ফসলের মাঠ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি দিশেহারা কৃষকদের।

উপজেরা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবারের মওসুমে রাজনগর উপজেলার হাওর কাউয়াদীঘি ও মনু ব্যারেজরে আওতাধীন প্রায় সাড়ে ১২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন কৃষকেরা। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ছিল ৩২ হাজার ৬শ মেট্রিকটন চাল। প্রতিবছর মনু ব্যরেজের বিভিন্ন এলাকায় মনু নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে বোরো ফসলের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। নিরাপদ থাকত কাউয়াদীঘি হাওরের ৯ হাজার হেক্টর বোরোর মাঠ। কিন্তু এ বছর দীর্ঘ খরার পর বৃষ্টির সঙ্গে শুরু হয়েছে শিলা ঝড়। বিশেষ করে গত ৯ এপ্রিলের কালবৈশাখী ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে ঘর-বাড়ির ব্যপাক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি অপূরণীয় ক্ষতি হয় কাউয়াদীঘি হাওরের কৃষকের। ওই দিনের শিলা বৃষ্টিতে হাওর এবং ৪টি ইউনিয়নের ২৫টিরও বেশি গ্রামের ৪ হাজার একর জমির পাকা ও আধাপাকা বোরো ধান পুরোপুরি ও আংশিক ক্ষতি হয়। এসব জমির পাকা ধান শিলা বৃষ্টিতে ঝড়ে পড়েছে।
কাউয়াদীঘি হাওর ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জমিতে ধানের শিষ আছে তবে এতে একটি ধানও নেই। আবার কোথাও আংশিক ধান আছে। আর যে জমি এখনো পাকার বাকি আছে ওই ধানের শিষেও ধান নেই। উপজেলার ফতেহপুর, পাঁচগাঁও, উত্তরভাগ ও মুন্সিবাজার ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রামের বোরো ফসলের মাঠ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষকের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও কৃষি অধিদপ্তর বলছে প্রায় দেড় হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এদিকে গত সোমবার (১৩ এপ্রিল) সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহনি আলী এমপি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
ধলিজুড়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রব (৬৫) বলেন, ‘কিলা (কিভাবে) ভালা থাকতাম খউকা (বলেন)। ৫০ কেয়ার (বিঘা) জমি ক্ষেত করছিলাম। কিন্তু হিলে (শিলা) সারা ফালাই দিছে। এক কেয়ার জমিন থাকি ৩ মন ধানও ফাওয়া যাইতনায় (যাবেনা)। ধান কাটানির খরচও উঠতো নায়’। বেতাহুঞ্জা গ্রামের আব্দুল ওয়াহিদ বলেন, ‘শিলায় আমাদের সব শেষ। যে ৫-৬ কিয়ার জমি ক্ষেত করেছিলাম তা থেকে আর ধান পাওয়া যাবেনা’। মেদেনিমহল গ্রামের বর্গা চাষি লুৎফুর রহমান বলেন, ‘৩৫ কেয়ার জমি ক্ষেত করেছি। আনেক টাকা ঋণ। শিলার আঘাতে সব শেষ। এখন বেঁচে থাকাই মুশকিল’। একই অবস্থা ওই গ্রামের আরেক বর্গা চাষি লায়েক আলীর। তিনি ৯ কেয়ার জমি ক্ষেত করেছিলেন। কিন্তু ধান কাটার আগমূহুর্তে শিলা বৃষ্টি কেড়ে নিল তার সব।
রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা জানান, শিলা বৃষ্টিতে আমরা প্রাথমিকভাবে ক্ষতির পরিমান ১হাজার একর দেখিয়েছি। সঠিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনের জন্য আমাদের কর্মীরা কাজ করছেন। এতে ক্ষতির পরিমান বাড়তেও পারে।