বরিশাল থেকে এম.মিরাজ হোসাইন: প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে রক্ষা পেলে গত কয়েক বছরের ন্যায় চলতি মৌসুমেও বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে বোরো ধানের ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। শষ্য ভান্ডার বলে খ্যাত জেলার দশটি উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় ইতিমধ্যে আগাম রোপন করা বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে।
গত ৪/৫দিন থেকে উপজেলাগুলোতে আগাম বোরো ধান কাটা শুরু হওয়ায় কৃষক পরিবারের সদস্যরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের বিভিন্ন এলাকার বোরো ফসলের সবুজ মাঠ এখন ক্রমেই সোনালী হয়ে উঠেছে। কোনো কোনোস্থানে আগাম রোপন করা বোরো ধান কাটাও শুরু হয়েছে। কৃষকেরা জানিয়েছেন, বোরো জমিতে এবার পোকার আক্রমণ তেমন ছিলো না। সময় মতো সার, বীজ ও সেচকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করায় গত কয়েক বছরের ন্যায় এবারও বোরো ধানের ভালো ফলন ফলেছে। সূত্রে আরো জানা গেছে, চলতি মৌসুমে কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে এবারও ভালো ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বরিশাল সদর উপজেলার চাষিরা জানিয়েছেন, গুটি ইউরিয়া সার প্রয়োগের মাধ্যমে আগাম সুগন্ধি লাল তীর ধানের চাষ করে তারা প্রতি শতকে দেড় মন ধান ফলন পেয়েছেন। নমুনা কর্তনের পর এবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে লাল তীর ধান চাষে হেক্টর প্রতি ৭ মেট্রিক টনেরও অধিক ফলন ঘোষণা করা হয়েছে। যা গত বছরে তুলনায় অনেকগুণ বেশি। অপরদিকে জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার জোবারপাড় গ্রামের কৃষক জগদীশ বৈরাগীর বোরো ক্ষেতের ব্রি ধান-৫৯ কেটে মঙ্গলবার সকালে কৃষক মাঠ দিবস পালন করা হয়েছে। প্রধান অতিথি হিসেবে মাঠ দিবসের উদ্বোধন করেন বরিশাল বিডিএস’র উপ-নির্বাহী কর্মকর্তা জেমস পি. বিশ্বাস। তিনি জানান, সিসা বিডি প্রকল্পের আওতায় আধুনিক কৃষি উন্নয়নের জন্য তারা বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলার ২৫টি উপজেলায় কাজ করছেন। তিনি আরো জানান, চলতি মৌসুমে ব্রি-৫৯ ধানের ফলন হয়েছে প্রতি হেক্টরে ৭.২ মেট্রিক টন।
বরিশাল কৃষি অঞ্চলের বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, কৃষি অঞ্চলের আওতাধীন বরিশালে ৬১ হাজার ৩৬৯ হেক্টর, পিরোজপুরে ১৯ হাজার ১৩৪, ঝালকাঠীতে ৮ হাজার ৪৯৭, ভোলায় ৫৫ হাজার ৫২৭, পটুয়াখালীতে ৩ হাজার ৫৭৫, বরগুনায় ৬১৭, রাজবাড়িতে ১৮ হাজার ৫২৪, ফরিদপুরে ৩৫ হাজার ২২৫, গোপালগঞ্জে ৭২ হাজার ৬৩৬, মাদারীপুরে ৪০ হাজার ৯৬৪ ও শরীয়তপুরে ৩১ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে সর্বমোট ৩ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫০৩ হেক্টর জমিতে ইরি, হাইব্রীড ও স্থানীয় জাতের বোরো চারা রোপনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এতে সর্বমোট ১ কোটি ৩ লক্ষ ৫৫ হাজার ১১১ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হবে।
তিনি আরো বলেন, চলতি মৌসুমে বরিশালের সর্বত্র বোরো ধানের ব্যাপক ফলন হয়েছে। কোথাও কোনো প্রকার প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে চলতি বছর বোরো ধানের রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন হবে বলেও তিনি আশা করছেন। তিনি বোরো ধান ৮০ ভাগ পাকলেই কেটে ফেলার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন। অন্যথায় ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ইরি-বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি বয়ে আনতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।