শেরপুরে কালবৈশাখী ঝড়ে ২ শিশুসহ ৩ জনের মৃত্যু

শেরপুর থেকে হাকিম বাবুল: শেরপুরে মঙ্গলবার রাতের কালবৈশাখী ঝড়ে দুই শিশুসহ তিনজন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে শ্রীবরদী উপজেলার হেরুয়া চর ভেদর গ্রামের আলিমদ্দিনের ছেলে ধানকাটা শ্রমিক হায়দার আলী (৫৫) ও রানীশিমুল এলাকার আট বছর বয়সী শিশু কাজলী বেগম গাছ পড়ে ঘরচাপায় এবং নকলা উপজেলার মোজাকান্দা গ্রামের শরুফা বেগম (১০) বজ্রপাতে নিহত হয়েছে।

আহতদের মধ্যে ঘুুঘুরাকান্দি বাজারে শতবর্ষি একটি বটগাছের নিচে চাপা পড়ে গুরুতর অবস্থায় আবুল কাসেমকে (২৫) জামালপুর জেলারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) দিবাগত সাড়ে ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত এক ঘন্টাব্যাপী জেলার পাঁচ উপজেলার উপর দিয়ে এ কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়।

কালবৈশাখী ঝড়ে জেলায় প্রায় তিন শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ও দোকানপাট বিধ্বস্ত হয়েছে। উপড়ে পড়েছে শত শত গাছপালা। পাকা বোরো ধানেরও ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে ঝিনাইগাতীর গুরুচরণ দুধনই বাজারের ৩৫ টি দোকান ও পাঁচটি বসত ঘর মাটির সাথে গুড়িয়ে গেছে। শেরপুর সরকারী কলেজ, নকলা এমদাদিয়া দাখিল মাদ্রসা, নালিতাবাড়ীর চিনামার দাখিল মাদ্রাসাসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টিনের চাল উড়ে গেছে। এদিকে, ঝড় শুরুর সময় রাত সাড়ে ১২ টা থেকে বুধবার ২২ এপ্রিল দুপুর একটা পর্যন্ত শেরপুর জেলা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে। রাস্তায় গাছ পড়ে থাকার কারণে শেরপুর-ঝিনাইগাতী সড়কে বুধবার সকাল ১০ টা পর্যন্ত বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ ছিল। পরে রাস্তা থেকে গাছ অপসারণ করে যান চলাচল শুরু হয়।

পুলিশ ও এলকাবাসী সুত্রে জানা যায়, নিহত হায়দার আলীসহ কয়েকজন শ্রমিকের একটি দল শ্রীবরদী থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলার কলসপাড় ইউনিয়নের তারাকান্দি গ্রামে বোরো ধান কাটার জন্য কয়েকদিন আগে এসেছিলেন। ৮-১০ জন শ্রমিক প্রতিদিনের মত কাজ শেষে রাতে স্থানীয় কাসেম আলীর বাড়িতে ঘুমিয়ে পড়েন। হঠাৎ রাত আনুমানিক সোয়া একটার দিকে প্রচন্ড কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়। এসময় ঘরের সাথে থাকা একটি বড় আকাশমনি গাছ ভেঙ্গে চালের উপর পড়লে  ঘরের চাল ভেঙ্গে চাপাপড়ে ঘটনাস্থলেই  হায়দার আলীর মুত্যু হয়। এ সময় অন্যান্য শ্রমিকরা ঘর থেকে বের হয়ে রক্ষা পায়।
নালিতাবাড়ী থানার উপপরির্দশক(এসআই) আবদুর রশিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মো. শরিফ ইকবাল জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাতের ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে উপজেলার প্রায় আড়াই হাজার হেক্টও জমির বোরো ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র দেবনাথ জানিয়েছেন, ঝড়ের কারণে শেরপুরের সঞ্চালন লাইনে ক্রুটি দেখা দিয়েছে। লাইন মেরামতের কাজ চলছে। আজ (বুধবার) সারাদিনও বিদ্যুৎ না থাকতে পারে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকীর হোসেন জানিয়েছেন, কালবৈশাখী ঝড়ের সময় শেরপুরের নালিতাবাড়ীর বালুঘাটা এলাকায় এক ধানকাটা শ্রমিক, শ্রীবরদীর রানীশিমুল এলাকায় ঘরচাপা পড়ে এক শিশু এবং নকলায় বজ্রপাতে আরেক এক নিহত হয়েছে। পাঁচ উপজেলার ইউএনও এবং পিআইওদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।