গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) থেকে আতাউর রহমান মিন্টু: ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে কালবৈশাখী ঝড়ে বিধ্বস্ত, মাটিতে পড়ে যাওয়া একটি বড় আকারের রেইনট্রি গাছ লোকজনের সামনে হঠাৎ দাঁড়িয়ে যাওয়ার ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনাকে ঐশ্বরিক ঘটনা ভেবে প্রতিদিন হাজার হাজার লোক গাছটি দেখতে আসছে। অনেকে বিভিন্ন মানত করে গাছের ছাল ও পাতা সংগ্রহ করছে, মোনাজাত করছে। এ ঘটনায় উদ্ভিদ বিজ্ঞানের শিক্ষক-ছাত্ররা কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারছে না।
রবিবার রাতে কালবৈশাখী ঝড়ে উপজেলার পাগলা থানার খুরশীদ মহল গ্রামে মাওলানা নছরত উল্লাহ’র একটি রেইট্রি গাছ বিধ্বস্ত হয়ে প্রতিবেশী মোঃ রফিকুল ইসলামের ঘরের চাল ভেঙে মাটির উপর পড়ে যায়। ঘরের চালটিও বিধ্বস্ত হয়। সোমবার সকাল থেকে গাছ কাটার করাতিরা গাছের ডালপালা কাটতে থাকে। বিকাল ৫টার দিকে গাছের সর্বশেষ ছোট একটি ডাল কাটার সাথে সাথে করাতি এবং উপস্থিত লোকজনকে অবাক করে দিয়ে মাটিতে পড়ে থাকা সাড়ে ৭ ফুট বেড় এবং ২৭ ফুট লম্বা বৃহৎ আকারে গাছটি নিজে নিজেই উপরের দিকে উঠতে থাকে। ২ মিনিট সময় নিয়ে গাছটি পুরোপুরি দাঁড়িয়ে যায়। এ সময় গাছের অবস্থান আগের অবস্থান থেকে ২/৩ ফুট পশ্চিম দিকে সরে যায়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত এখলাছ উদ্দিন, উজ্জল, রফিকুল ইসলাম, সুমন মিয়া জানায়, যখন গাছটি উপরের দিকে উঠছিল তখন আমাদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। করাতি কাদির মিয়া জানায়, গাছ রশি দিয়ে বাঁধা ছিল। এ অবস্থায় রশিসহ গাছটি উপরের দিকে উঠে যায়। আমরা ভয়ে দূরে সরে যাই। এ ঘটনার পর থেকে গত ৪ দিন যাবৎ গাছটি দেখতে গফরগাঁওসহ আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে নছিমন, টমটম, সিএনজি, অটোরিক্সা, মটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন করে হাজার হাজার লোক খুরশিদমহল গ্রামে মাওলানা নছরত উল্লাহ‘র বাড়িতে ভিড় করছে। লোকজন গাছের ডালপালা, পাতা ও ছাল সংগ্রহ করছে। অনেকে গাছের সামনে দাঁড়িয়ে মোনাজাত করছে। মানুষের ভিড় সামলাতে এ বাড়ির লোকজনকে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে গাছের মালিক উপজেলার সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রবীণ আলেম হোসেনপুর জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা নছরত উল্লাহ (৯৩) বলেন, এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা।
তবে এ ঘটনার কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারছে না উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ছাত্র-শিক্ষকরা। গফরগাঁও সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক মোঃ জাহাঙ্গীরুল ইসলাম বলেন, আমার জানা মতে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে এ ঘটনার কোনো ব্যাখ্যা নেই। ছোট চারা গাছ হলে কোনো কারণে গাছটি দাঁড়িয়ে গেলে হয়তো ব্যাখ্যা দেওয়া যেত। মাটিতে পড়ে যাওয়া এত বড় গাছ ১০/১৫জন ব্যক্তির পক্ষেও তোলা সম্ভব নয়। সেখানে গাছটি নিজে নিজে দাঁড়িয়ে গেছে।
উপজেলার কান্দিপাড়া আব্দুর রহমান ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ উদ্ভিদ বিজ্ঞানের শিক্ষক কাওছার আহম্মেদ বলেন, এত বড় গাছ নিজে নিজে দাঁড়িয়ে যাওয়া বিজ্ঞানের হিসেবে পড়ে না। তা অলৌকিক ঘটনা বটে।