মৌলভীবাজার থেকে আজিজুল ইসলাম: মৌলভীবাজারের মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ৩৬টি স্পট মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে বৈশাখ মাসে সামান্য বৃষ্টিপাতেই মনু তীরের মানুষের ভাঙ্গন নিয়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্পটগুলোর বেশির ভাগই কুলাউড়া উপজেলায়।
২০১১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ স্পটের সংখ্যা ছিল ২২টি। পরবর্তী ৪ বছরে তা বেড়ে হয়েছে ৩৬টি। জেলার তিন উপজেলার মনু তীরবর্তী অর্ধশত গ্রামের বাসিন্দারা ঝুঁকিপূর্ণ স্পটগুলো মেরামতের দাবি আগেও একাধিক বার করেছেন। কিন্তু নামমাত্র প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু কিছু স্পট প্রাথমিকভাবে মেরামত করা হয়েছিল। কিন্তু স্থায়ীভাবে কোনও মেরামত না হওয়ায় ভাঙ্গন আতংক বিরাজ করছে মনু তীরবর্তী গ্রামগুলোর মানুষের মধ্যে। বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার সাথে সাথেই মনু তীরবর্তী কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর, হাজীপুর, পৃথিমপাশা ও টিলাগাঁও এই ৪টি ইউনিয়নসহ জেলার মোট ৮টি ইউনিয়নের নদী পাড়ের সহস্রাধিক পরিবার রয়েছেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়।
সরেজমিন গিয়ে মনু তীরবর্তী মানুষের সাথে আলাপকালে জানা যায়, মনু নদীর কমপক্ষে ৩৬টি স্পট ঝুঁকিপূর্ণ। মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে সবচেয়ে বেশি ভাঙ্গন সৃষ্টি হয় কুলাউড়া উপজেলা অংশে। কেননা সীমান্তের ওপার থেকে বয়ে আসা মনু নদীর পাহাড়ী ঢল কুলাউড়া অংশে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। তাছাড়া নদীতে সৃষ্ট বিশাল বাঁক অনেক সময় নতুন করে ভাঙ্গনের সৃষ্টি করে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত উন্নয়ন কাজ প্রতিরক্ষা বাঁধে কোন সুফল বয়ে আনে না। তাছাড়া বর্ষা মৌসুম এলেই যেন তাদের মনে পড়ে প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামতের কথা। ফলে মেরামতের নামে যে বরাদ্দ আসে তার সিংহভাগ যায় ঠিকাদার আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পেটে। আর মেরামতকৃত অংশ যায় নদীর পেটে।
মনু নদীর কুলাউড়া উপজেলা অংশে চাতলাপুর, নিশ্চিন্তপুর, সুলতানপুর, রনচাপ, মাদানগর, হাসিমপুর, বেলেরতল, কলিরকোনা, রাজাপুর, আশ্রয়গ্রাম, কটারকোনা, জালালপুর, খন্দকারগ্রাম, তাজপুর, মিয়ারপাড়া, সন্দ্রাবাজ, বালিয়া এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ। রাজনগর উপজেলার চাটিকোনগাঁও, উত্তর চাঁটি, কাকির চক, উজিরপুর, কাঞ্জিরপুল, একামধু, আদিনাবাদ, শ্বাশমহাল, কালাইকোনা, ভোলানগর, কামারচক, প্রেমনগর ও খাস-প্রেমনগরের ৪টি স্পট, এবং মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নৈয়ারহাই, চাঁনপুর, বাসুদেব শ্রী, বড়হাট এলাকাসহ ৩৬টি স্পট পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঘোষণায় মারাত্মক ঝুকিপূর্ণ।
পৃথিমপাশা ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ জানান, ইউনিয়নের বেলেরতল, রাজাপুর ও কলিরকোনা, সুজাপুর অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এই ৪টি স্থান জরুরি ভিত্তিতে মেরামত প্রয়োজন।
সরেজমিনে কলিরকোনা ও বেলেরতল বাঁধ দেখতে গেলে স্থানীয় সুয়েব উদ্দিন জিল্লু, জামিল আহমদ চৌধুরী, কামরুল হাসান, ক্ষেতমজুর সমিতির নেতা কমরেড মোশাররফ হোসেন জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামত না করলে এবার আর রক্ষা নেই। টানা বৃষ্টি হলে অনায়াশে বেলেরতল এলাকা দিয়ে পানি প্রবেশ করবে লোকালয়ে। ফলে এই এলাকার মানুষ সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছে।
হাজীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা সমাজসেবক আব্দুল বাছিত বাচ্চু জানান, ঝুঁকিপূর্ণ স্পটগুলো দীর্ঘ দিন থেকে সংস্কার না হওয়ায় এ বছর বন্যার ঝুঁকি বেড়ে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্পটগুলো দ্রুত মেরামত করা প্রয়োজন।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চানপুর ও নৈয়ারহাই এলাকার আব্দুল আহাদ, তাপস পাল, রিপন আচার্য্য, সঞ্জয় দেব অভিযোগ করে বলেন, গেল বছর চানপুরে ৭শ ও নৈয়ারহাইয়ে ৬শ মিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গেছে। শতাধিক বাড়ি বন্যায় বিধ্বস্ত হয়। অনেক ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ভেঙ্গে যাওয়া এ স্থানে বর্ষা ঘনিয়ে আসলেও কাজের কোনও আলামত দেখছি না।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রব জানান, আমাদের হিসেবে মনু নদীর ৩১টি স্পট ঝুঁকিপূর্ণ। ইতিমধ্যে ৮-১০টি স্পটে কাজ শুরু হয়েছে। সবকটি স্পট মেরামতের জন্য আমরা ২০০ কোটি টাকার প্রকল্পের প্রস্তাব উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এ সপ্তাহে পাঠাবো। প্রকল্প চূড়ান্ত হলে বাকি কাজ শুরু করা হবে।