দাশুড়িয়ায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ, সাংবাদিক লাঞ্ছিত

ঈশ্বরদী (পাবনা) থেকে প্রতিনিধি: ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আবারো প্রশ্ন ফাঁস ও ঘটনার ছবি তোলার সময় সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ময়েন পরীক্ষার দিন সকালে প্রশ্ন দেয় এবং ছাত্র-ছাত্রীর মায়েরা সেগুলো লিখে নেয়। শিক্ষিকা নাসিমা নাসরিন সকালে এসে প্রশ্ন নিয়ে গিয়ে তার ছেলে সিয়ামকে ২ ঘন্টা বাড়িতে পড়ায় বলে জানা যায়।
ishwardi-27,4,15
এ ঘটনা প্রচারিত হলে কালিকাপুর জবেদা খাতুন সাবান আলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান রিকাত এরূপ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২৩শে এপ্রিল সকাল সাড়ে আটটায় শিক্ষক ময়েনের প্রাইভেট পড়ানোর ঘরে গেলে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঈশ্বরদী ফটো জার্ণালিষ্ট এসোসিয়েশনের সাহিত্য সম্পাদক গোপাল অধিকারী ও সাপ্তাহিক জনদৃষ্টির প্রতিনিধি সাজন অধিকারী। প্রাইভেট পড়ানোর কক্ষে ফটো সাংবাদিকরা দেখতে পান, শিক্ষক ময়েন প্রত্যেক টেবিলে একটি করে প্রশ্ন দিয়ে চেয়ারে বসে আছেন এবং তার সামনের টেবিলগুলোতে ছাত্র-ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা সেগুলো তুলে নিচ্ছে। এ সময় শিক্ষিকা নাসিমা নাসরিনকেও দেখা যায়।

সাংবাদিক গোপাল অধিকারী এ সময় প্রশ্ন নিয়ে নেয় এবং ছবি তুললে শিক্ষক ময়েন তার উপর চড়াও হয়ে লাঞ্ছিত করে। এক পর্যায়ে তার হাত থেকে ক্যামেরা কেড়ে নেয় ও প্রশ্ন ছিঁড়ে ফেলে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি  বলেন, ছবি তুলে আমার কিছু করতে পারবে না। আমি ৩০ বছর যাবৎ পড়াচ্ছি। আমার বিরুদ্ধে কেউ রিপোর্ট করবে না। উপজেলা শিক্ষা আফিসার ও ম্যানেজিং কমিটির রেজুলেশন করা আছে বলে তিনি জানান । এ সময় তিনি বলেন, এর আগেও অনেক রিপোর্ট হয়েছে, আমাকে কেউ কিছু করতে পারবে না।

স্থানীয়রা জানান, শিক্ষক ময়েন অনেক আগে থেকেই প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত। ২০০৭ সালে এলাকার ডাঃ আলীমের হাতে ধরাও পড়ে। কিন্তু কোনও শাস্তি না হওয়ায় তিনি এখন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সৃষ্টির মা জানান, ময়েনের কাছে না পড়ানোয় সৃষ্টিকে সে অকারণে ক্লাশে মারত। বাধ্য হয়ে তার কাছে পড়াচ্ছি। এ সময় শিক্ষকা নাসিমাকে তার অবস্থানের কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, সে প্রতিদিনই বিদ্যালয়ে আগে আসে। তবে তাঁর ছেলেকে ময়েনের কাছে প্রাইভেট পড়ার কথা স্বীকার করেন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষক রতন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অভিভাবক সচেতন হলে এই অপকর্ম বন্ধ করা সম্ভব। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা কামরুন্নাহার জানান, তিনি ঘটনাটি শুনছেন, ট্রেনিং শেষে মিটিং করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বাদশা মালিথার কাছে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি জানান, তাকে পড়ানোর অনুমতি দিয়েছি, কিন্তু প্রশ্নফাঁস করার মতো আপরাধ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ঘটনা সত্য হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

এদিকে সাংবাদিকের ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে, ঈশ্বরদীর সাংবাদিক সমাজ, নাগরিক মঞ্চ ও ঈশ্বরদী ফটো সাংবাদিক এসোসিয়েশন। এ ঘটনায় মুঠোফোনে নাগরিক মঞ্চ ,ঈশ্বরদীর সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ইত্তেফাকের ঈশ্বরদী প্রতিনিধি স্বপন কুন্ডু’র প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষকের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দায়িত্ব পালনের সময়  সাংবাদিকের ক্যামেরা কেড়ে নেয়া ও লাঞ্ছিত করার ঘটনায় তিনি চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং এ ব্যাপারে তিনি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও ম্যানেজিং কমিটির পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।

ঈশ্বরদী ফটো সাংবাদিক এসোসিয়েশনের  সভাপতি ওয়াহেদ আলী সেন্টু বলেন, সাংবাদিকরা সমাজের অসংগতি ও উন্নয়নের দিক তুলে ধরে পেশাগত দায়িত্ব পালন করবে, এটাই স্বাভাবিক। শিক্ষক ময়েনের সাংবাদিক গোপাল অধিকারীর পেশাগত দায়িত্বে বাধা এবং ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক বলে তিনি জানান। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি শিক্ষক ময়েনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এদিকে ময়েন ছিঁড়ে ফেলা প্রশ্নকে সাজেশন বলে আখ্যায়িত করলেও সেই প্রশ্নেই গত ২৫শে এপ্রিল গণিত পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। পরে পরীক্ষার প্রশ্ন যাচাই করলে ফাঁস করা প্রশ্নে সাথে সব মিল পাওয়া যায়।

শিশুর মেধাকে ধ্বংস করে প্রশ্ন ফাঁসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকার শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সুশীল সমাজ। নওদাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বকুল সরদার এক প্রতিক্রিয়ায় জানান, এটা শিশুর মেধাকে ধ্বংস করার সামিল। তাই এটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।