মধুপুর (টাঙ্গাইল) থেকে আব্দুল্লাহ আবু এহসান: টাঙ্গাইলের মধুপুরে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নামে একটি চক্রের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার জের হিসেবে অভিযোগকারী লাল মিয়া চাঁদাবাজদের হুমকির মুখে সপরিবারে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সন্দেহভাজন একাধিক ব্যক্তি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও হয়েছে।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত এক বছর ধরে একটি চক্র উপজেলার রানিয়াদ গ্রামবাসীদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ সহজে পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ ঘটনার সাথে বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারী জড়িত। এ চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর পক্ষে লাল মিয়া স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) চেয়ারাম্যানের কাছে পাঠানো হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযুক্তরা সংঘবদ্ধ হয়ে গত ২১ এপ্রিল প্রথমে অভিযোগকারী লাল মিয়াকে আক্রমণ করে মারপিট করে। সংঘবদ্ধ ওই চক্রের নেতা রানিয়াদ গ্রামের শাহীন, জয়নাল আবেদীন, কবিরদের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে ওইদিনই লাল মিয়া স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। পালিয়ে থাকা সাবেক ইউপি সদস্য লাল মিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে এ প্রতিবেদকের কাছে বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন।
এদিকে একইদিন রাত ১০ টার দিকে ওই চাঁদাবাজ চক্রের হাতে পালিভিটা আটাপাড়া গ্রামের আবুল হোসেনের দোকানের সামনে মৃত আব্দুল জুব্বারের ছেলে হাবিবুর রহমান হাবু ও কোরবান আলীর ছেলে আব্দুল সালাম শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন। লাঞ্ছিতরা জানান, আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ সহজে পাওয়ার আসায় তাদের টাকা পয়সা দিয়েছি। এতদিনেও সংযোগ না পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলায় আমরা লাঞ্ছিত হয়েছি। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠায় তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অভিযোগকারীকে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেছেন। যাদের সন্দেহ হচ্ছে তাদের পেটাচ্ছেন এবং লাঠিসোটা হাতে এলাকার টার্গেট ব্যক্তিদের খুঁজে বেড়াচ্ছেন। হুমকি ধামকি দিয়ে ভয়ভীতি দেখচ্ছেন। বলে বেড়াচ্ছেন টাকা পয়সা দেওয়ার কথা বললে সারা জীবনেও বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যাবে না।
এ নিয়ে এলাকায় বেশ আতংক বিরাজ করছে। ওই চক্রের বিরাগভাজনরা এখন এলাকা থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জয়নাল আবেদিনের সাথে কথা বললে তিনি বিষয়টি বিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেন। ওই চক্রের সদস্য বর্তমান ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান, এলাকাবাসী বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে ১হাজার/দেড় হাজার টাকা করে উত্তোলন করে কাজ করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে এক ব্যক্তি ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে সংযোগ পাওয়ায় বাধা সৃষ্টি করেছেন। এলাকাবাসী তাই উত্তেজিত হয়ে হয়ত কিছু করতে পারেন।
মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় সিরিজ প্যাকাজে রানিয়াদ গ্রামে ১২ কি.মি. বিদ্যুতায়ন করার পরিকল্পনার প্রথম ধাপে ৯টি সেচ পাম্প, ২ টি স’মিল ও ৭শ গ্রাহককে সংযোগ সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্তে কাজ এগুতে থাকে। এই সুযোগে স্থানীয় প্রভাবশালী জয়নাল আবেদীন, কবির হোসেন, শাহিন, রফিকুল ইসলাম গংরা বিদ্যুৎ প্রত্যাশীদেরকে সমিতির সদস্য করা, ম্যাপ অংকন, খুঁটি সরবরাহ, মিটারসহ নানা খরচপাতির নামে মিটার প্রতি ৫/৬ হাজার টাকা করে বিনা রসিদে উত্তোলন করে। এই টাকার পরিমাণ প্রায় অর্ধকোটি। এ ব্যাপরে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১ এর মধুপুর জোনাল অফিসের ডিজিএম মোল্লা আবুল কালাম জানান, আমরা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।