চিকিৎসা অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যু: দু’ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা

খুলনা থেকে সোহরাব হোসেন: খুলনার বয়রায় আদ-দ্বীন আকিজ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় হাসপাতালের দু’নারী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত নবজাতকের পিতা মোঃ সিরাজুল ইসলাম বাদি হয়ে মঙ্গলবার খুলনার আমলী আদালত ‘গ’ অঞ্চল ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।

আদালতের বিচারক মো. ফারুক ইকবাল মামলাটি রেকর্ড করার জন্য খালিশপুর থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দিয়েছেন। এজাহারে গাইনী বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মুক্তা ও কনসালটেন্ট (সনোলজিষ্ট) ডা. দিলারা পারভীনকে আসামি করা হয়েছে।

এজাহারে বাদি উল্লেখ করেন, তার গর্ভবতী স্ত্রী সাদিয়া ইসলাম টিনাকে নিয়ে তিনি গত ১০ এপ্রিল আদ-দ্বীন আকিজ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনী বিভাগে ডা. মুক্তা’র তত্বাবধায়নে ভর্তি হন। ওইদিন তিনি ১৪টি পরীক্ষা করাতে দেন। এভাবে কয়েকদফা একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রিপোর্ট দেখে গর্ভের ‘শিশু ও মা’ ভালো আছে বলে জানান তিনি। কিন্তু ২৬ এপ্রিল তার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে ডা. মুক্তার পরামর্শে পূনরায় তাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই সময় ‘নরমাল ডেলিভারী’ হবে জানিয়ে চিকিৎসক তার কাছে সাড়ে ৫ হাজার টাকা দাবি করেন। এক পর্যায়ে তার স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হওয়ায় প্রয়োজনে ‘সিজার’ করতে হলেও বাদি ‘মা ও বাচ্চা’কে সুস্থ রাখতে চিকিৎসককে অনুরোধ করেন। কিন্তু সিজার না করে ডা. মুক্তা মোবাইলে অন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রসূতিকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ দিতে থাকেন।

সোমবার সকালে প্রসূতির অবস্থা আরো খারাপ হলে অনেক ডাকাডাকি করেও কোনও চিকিৎসক ও নার্সকে পাওয়া যায়নি। উল্টো ডাকাডাকির কারণে তারা তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। এক পর্যায়ে কোনও চিকিৎসক ও নার্সের সহায়তা ছাড়াই বাদীর স্ত্রী একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেন। কিন্তু চিকিৎসা অবহেলার কারণে জন্মের কিছুক্ষণ পরই তার মৃত্যু হয়। এরপরই ডা. মুক্তা তড়িঘড়ি করে রোগীকে ছাড়পত্র প্রদান করেন। বিষয়টি হাসপাতালের পরিচালক ডা. গোলাম মোর্ত্তজাকে জানালেও তিনি কোনও গুরুত্ব দেননি।

বাদি সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ করেন, গাইনী বিভাগের কনসালটেন্ট (সনোলজিষ্ট) ডা. দিলারা পারভীনের করা ১০ এপ্রিলের আল্টাসনোগ্রাম রিপোর্টে ২৬ সপ্তাহ ৪ দিন বয়সের গর্ভের শিশুর ওজন ১ কেজির বেশি দেখানো হলেও ২৬ এপ্রিলের রিপোর্টে বয়স ২১ সপ্তাহ এবং ওজন আধা কেজিরও কম উল্লেখ করা হয়েছে। যার সাথে বাস্তবতার কোনও মিল নেই। দায়িত্বে অবহেলার মাধ্যমে তিনি ভুল রিপোর্ট দিয়েছেন বলেও অভিযোগ তার।

এদিকে, উল্লিখিত অভিযোগে আদালতে মামলা দায়েরের পর আদালত অভিযোগটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার জন্য খালিশপুর থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দিয়েছেন। একই সাথে আগামী ১০ মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন।