আসামকে রেখেই শেষ পর্যন্ত স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছ ভারতের মন্ত্রিসভা।
ভারত ও বাংলাদেশের ১৬২টি ছিটমহল বিনিময়ের জন্য ভারতীয় সংবিধান সংশোধনের এই বিল বুধবার রাজ্যসভায় ওঠার কথা। সেখানে পাস হয়ে এলে তা লোকসভায় পাস করাতে হবে।
আসাম বিজেপির পক্ষ থেকে স্থল সীমান্ত চুক্তির বিরুদ্ধে তীব্র বিরোধিতার মুখে চুক্তি থেকে আসামের ছিটমহলগুলো বাদ দেওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিবেচনা করছেন বলে এর আগে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এরপর স্থল সীমান্ত চুক্তি থেকে আসামকে বাদ না দিতে মোদীকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। আসামকে বাদ দিলে রাজ্যসভায় এ বিল পাসে সমর্থন দেওয়া হবে না বলে ইংগিত দেয় প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস।
শেষ পর্যন্ত সোমবার রাতে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহর বাসভবনে এক বৈঠকে আসামকে রেখেই প্রস্তাবটি পাসের জন্য তোলার সিদ্ধান্ত হয়। আসাম বিজেপির সভাপতি সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্যসহ দলের সাংসদরাও ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী মোদীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার ভারতের মন্ত্রিসভা সংবিধান সংশোধনের খসড় প্রস্তাব অনুমোদন করে।
আগামী ৮ মে লোকসভার চলতি অধিবেশন শেষে চীন, মঙ্গোলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া সফরে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী। এরপর জুন বা জুলাইয়ে বাংলাদেশে আসতে চান তিনি।
তবে ভারতীয় কূটনীতিকরা ইংগিত দিয়েছেন, ‘খালি হাতে’ ঢাকা সফরে যাওয়া মোদীর ‘ঠিক হবে না’। এ কারণে লোকসভার চলতি অধিবেশনেই বিলটি পাস করিয়ে আনতে মোদীর এই তাড়াহুড়ো।
ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি নামে পরিচিত ১৯৭৪ সালের স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা সফরে এসে প্রটোকলে স্বাক্ষর করেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং।
এর আওতায় বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের ১১১টি ছিটমহল এবং ভারতের সীমান্তে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল বিনিময় এবং ছয় দশমিক এক কিলোমিটার অমীমাংসিত সীমানা চিহ্নিত হওয়ার কথা।
বাংলাদেশি ছিটমহলগুলোতে জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ১৪ হাজার এবং ভারতীয় ছিটমহলগুলোতে জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার।
বাংলাদেশ ওই চুক্তিতে অনুসমর্থন দিলেও জমি হস্তান্তরে ভারতের সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন হওয়ায় বিষয়টি আটকে থাকে। ভারতের বিগত কংগ্রেস সরকার কয়েক দফা উদ্যোগ নিয়েও বিজেপি ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিতায় রাজ্যসভা ও লোকসভায় তা পাস করাতে ব্যর্থ হয়।
এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের অংশ হিসাবে ৬৫ বছর ধরে ঝুলে থাকা সমস্যাটি সমাধানের উদ্যোগ নেন। শুরু থেকে আপত্তি করে আসা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতাও নান চাপের মধ্যে শেষ পর্যন্ত সম্মতি দেন।
মোদী নিজেও বিভিন্ন সময়ে এ চুক্তি কার্যকরে জোর চেষ্টা চালানোর কথা বলেন। কিন্তু আসামে নিজের দলের ভেতর থেকেই তাকে বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয়।