মৌলভীবাজার থেকে আজিজুল ইসলাম: মৌলভীবাজারের জুড়ী-১ রেঞ্জের সাগরনাল বাঁশমহালে কাটারযোগ্য বাঁশের সংখ্যা ৭ বছরে (২০০৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত) কমেছে ৩৭ লক্ষাধিক। তবে চার মাসের ব্যবধানে দু’টি ইজারা বিজ্ঞপ্তির ফাঁকে ১০ লক্ষাধিক বাঁশ কমে কমে যাওয়ার ঘটনায় প্রধান বন সংরক্ষকের নির্দেশে একটি তদন্ত দল সম্প্রতি ওই মহালে বাঁশের সংখ্যা পুনর্গণনার প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করে। রহস্যজনকভাবে এভাবে বাঁশ কমার ঘটনায় মহালটি বিলুপ্তিরই আশংকা করছেন স্থানীয় লোকজন।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী সাগরনাল বাঁশমহালটির আয়তন ৩ হাজার ২৭৯ একর। সেখানে মাকাল, খাঙ ও টেংরা মুলি জাতের বাঁশ রয়েছে। বাঁশমহালটি ইজারা দিতে সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করেন। তখন দরপত্রের গেজেটে কাটারযোগ্য বাঁশের সংখ্যা ৫০ লাখ ৮০ হাজার ২০০টি উল্লেখ করা হয়। এ সময় মহালটিতে বাঁশের সংখ্যা গেজেটে উল্লেখিত সংখ্যার চেয়ে কম থাকার কথা দাবি করে পুনর্গণনার দাবি জানিয়ে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মহালটিতে বাঁশ পুনর্গণনা করা হয়।
গত বছর অর্থাৎ ২০১৪ সালের ৪ মার্চ সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ওই মহালে কর্তনযোগ্য বাঁশের সংখ্যা ৪০ লাখ ২০ হাজার ২০০টি উল্লেখ করে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করেন। তখন দরপত্রের প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়ে যায়। তবে সর্বোচ্চ দরদাতাকে বাঁশ কাটার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এদিকে পর পর দু’টি ইজারা বিজ্ঞপ্তির ফাঁকে ৪ মাসের ব্যবধানে হঠাৎ করে মহালটিতে বাঁশের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বিষয়টি বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়। এ অবস্থায় মহালটিতে কাটারযোগ্য বাঁশের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণে গত ১২ এপ্রিল প্রধান বন সংরক্ষক মো. ইউনুছ আলী বন বিভাগের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. আবু হানিফ পাটোয়ারীকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বাঁশের প্রজননের জন্য প্রতি চার বছর পর পর বাঁশমহাল ইজারা দেওয়া হয়। এর আগে ২০০৭ সালে সাগরনাল বাঁশমহালটি ইজারা দেওয়া হয়। তখন সেখানে কাটারযোগ্য বাঁশের সংখ্যা ছিল ৭৭ লাখ ৭০ হাজার ৯০০।
স্থানীয় লোকজন জানান, ৭ বছরের ব্যবধানে যদি ৩৭ লক্ষাধিক বাঁশ কমে যায় তাহলে এই মহালটি আগামী ৭-৮ বছরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সর্বশেষ দরপত্রে মহালটির সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করা হয় ৪ কোটি ৪৪ লাখ ১৫ হাজার ৮০০ টাকা। ফলে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
এদিকে কমিটির সদস্যরা মহালে ৬ থেকে ৯ মে সরেজমিনে বাঁশ পুনর্গণনার কাজ করেন। এ সময় বাঁশমহালটিকে ১০৮টি নমুনা প্লটে ভাগ করে (প্রতিটি প্লটের আয়তন দশমিক শূন্য ১ হেক্টর ধরে) বাঁশের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়।
বাঁশ পুনর্গণনা কমিটির সদস্য বন বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এফ এম জহিরুল হাসান জানান, পুনর্গণনার প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পুরো কাজ সম্পন্ন করতে আরও সময় লাগবে। এরপর বাঁশের সঠিক সংখ্যা বলা যাবে। এ ছাড়া কাজ সম্পন্ন করার পর এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। এখন এর বেশি কোনো মন্তব্য করা উচিত হবে না।
এ ব্যাপারে সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, আগে স্থানীয়ভাবে বাঁশ পুনর্গণনা করা হয়েছিল। সেক্ষেত্রে গণনায় পদ্ধতিগত সমস্যার কারণে বাঁশের সংখ্যা কম পাওয়া যেতে পারে।