তিন মাদরাসা শিক্ষক গ্রেফতার, ‘কল্পিত’ চুরির অভিযোগে দিনাজপুরে শিশুর ওপর পাশবিক নির্যাতন

রতন সিং, দিনাজপুর: চুরির অপবাদ দিয়ে দিনাজপুর সদরের একটি কাওমি মাদরাসায় নয় বছরের শিশুকে নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ওই মাদরাসার তিন শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকেলে সীমান্তবর্তী বড়গ্রাম থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ বুধবার তাদের আদালতে সোপর্দ করা হবে।

গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন রেজাউল ইসলাম (৪০), রিয়াজুল ইসলাম (৪২) এবং শরিফুল ইসলাম (৪৫)। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ঘটনার দায় স্বীকার করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আজকের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

CREATOR: gd-jpeg v1.0 (using IJG JPEG v62), quality = 90
স্বজনদের সঙ্গে নির্যাতনের শিকার আবু সাঈদ।

মাদরাসায় আদৌ চুরির কোনও ঘটনা ঘটেছে কি-না বা কোনও জিনিস চুরি হয়েছে কি-না এ বিষয়ে কেউই নিশ্চিত তথ্য দিতে পারেনি। কেউ কেউ ধারণা করছেন, ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে শিক্ষকরা শিশুটিকে নির্যাতন করেছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এ মাদরাসায় শিশুদের ওপর শারীরিক নির্যাতন নৈমিত্তিক ঘটনা। তারা এখানে অনৈতিক কার্যকলাপ হয় বলেও অভিযোগ করেছেন।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার কমলপুর ইউনিয়নের নূরানী তালিমুল কোরআন হাফিজিয়া কাওমি মাদ্রাসার নয় বছর বয়সী ছাত্র আবু সাঈদের বিরুদ্ধে চুরির এনে তিন শিক্ষক হাফেজ মো. রেজাউল ইসলাম, মাওলানা মো. রিয়াজুল ইসলাম এবং হাফেজ মো. শরিফুল ইসলাম সাঈদকে মাদরাসার একটি কক্ষে তিন দিন আটকে রাখেন। এ তিন দিন তার ওপর অমানবিক নির্যাতন করেন ওই তিন শিক্ষক। নির্যাতনের শিশুটি মারাত্মক আহত হয়।

বিষয়টি জানাজানি হলে প্রতিবাদী এলাকাবাসী নির্যাতনকারী তিন শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে। সোমবার রাতে এলাকাবাসী আহত আবু সাঈদকে উদ্ধার করে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। নির্যাতনকারী তিন শিক্ষক মাদ্রাসা ছেড়ে পালিয়ে যায়। মঙ্গলবার বিকেল অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে।

জয়রামপুর গ্রামের বাসিন্দা হাসান আলীর ছেলে আবু সাঈদ এ মাদ্রাসায় হেফজ বিভাগের ছাত্র। তিন শিক্ষক মিলে তার হাত-পা বেঁধে তিনটি বেত একত্রিত করে বেদম প্রহার করে সাঈদকে। এসময় সাঈদ জ্ঞান হারিয়ে ফেললেও নির্যাতন থামেনি। একই কায়দায় শনিবার ও রোববার তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়।

সাঈদ এ প্রতিবেদককে জানায়, শুক্রবার জুমা’র নামাজের পর মাদ্রাসার ছাত্রদের লাইন করে দাঁড় করানো হয়। এরপর মাদ্রাসার শিক্ষকরা তার মাথায় চাপ প্রয়োগ করে বুকে হাত দিয়ে বলেন, “এর বুক ধরফর করছে, এ চুরি করেছে”। এরপর সাঈদের হাত-পা বেঁধে তাকে বেদম প্রহার করে। এতে সাঈদ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

সাঈদের বাবা-মা জানান, আমাদের ছেলেকে যেভাবে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে এরকম নির্যাতন মানুষ গরু-ছাগলের ওপরও করে না। তারা আরও বলেন, সাঈদের কথা যেন প্রকাশ করা না হয় সেজন্য তিন শিক্ষক অন্য ছাত্রদের নির্দেশ দেয়।

সোমবার দুপুরে সহপাঠীদের কাছে প্রহারের কথা জানতে পেরে সাঈদের বাবা-মা মাদরাসায় গিয়ে লোমহর্যক নির্যাতনের কথা জানতে পারেন। আবু সাঈদের বাবা মঙ্গলবার সকালে কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন।

মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা  হাফেজ মো. গোলাম মোস্তফা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এভাবে কোনও শিক্ষক ছাত্রদের নির্যাতন করতে পারে না। এ ব্যাপারে মাদরাসার কোনও শিক্ষক তাকে কিছুই জানাননি। শিক্ষকদের এ ধরনের আচরন গ্রহণযোগ্য নয়।

মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাজেদুর রহমান জুয়েল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।