আব্দুল্লাহ আবু এহসান, মধুপুর (টাঙ্গাইল): মাত্র ২০ হাজার টাকা জরিমানা, কানে ধরে উঠ-বস আর কয়েক ঘা জুতা পিটিয়ে শিশু ধর্ষণের বিচার করেছেন সালিশদাররা। জরিমানার টাকাও বাকি রাখা হয়েছে। সালিশটি হয়েছে মধুপুর পৌর শহরের চাড়ালজানী এলাকায়।
মধুপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী নারায়ণচন্দ্র গৌড়ের (৫০) বিরুদ্ধে দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিশু ধর্ষণের অভিযোগে অনুষ্ঠিত এ বিচার নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ধর্ষণের শিকার শিশুটির এক আত্মীয়ের বাসায় এ সালিশ বসে। সালিশে উপস্থিত থাকা একাধিক ব্যক্তি এ বিচারকে প্রহসন অভিহিত করে বলেছেন, এটা ধর্ষককে রক্ষার কৌশল।
এলাকাবাসী জানান, ১৭ মে নারায়ণ শিশুটিকে চিপসের লোভ দেখিয়ে স্কুল ক্যাম্পাসে নিয়ে ধর্ষণ করেন। আহত অবস্থায় শিশুটির মা ঘটনাস্থল থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে না নিয়ে বাড়িতে রেখেই সেবা করে কিছুটা স্বাভাবিক করেন। ওই পিতৃহীন শিশুর পরিবার বিষয়টি স্থানীয় লোকজনের কাছে জানালে তারা বিচারের কথা বলে ঘটনাটিকে চেপে রাখতে বলেন।
তবে এলাকার নেতৃস্থানীয়দের এ নিয়ে কোনও উদ্যোগ দেখতে না পেয়ে দরিদ্র ওই পরিবারের সদস্যরা স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে জানালে সভাপতি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। মৌখিক অভিযোগ পেয়ে সভাপতি গত বুধবার বিকেলে নারায়ণ গৌড়কে সাময়িক বরখাস্ত করেন। এদিকে বুধবার সন্ধ্যায় এ নিয়ে স্থানীয় উদ্যোগে বিচার বসানোর কথা থাকলেও পরের দিন বৃহস্পতিবার বিচার বসে।
বিচারে ২০ ঘা জুতার বাড়ি, কান ধরে উঠ-বস ও ২০ হাজার টাকা জরিমানার রায় হয়। বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পিয়ন মধুকে ১০ ঘা জুতাপেটা করার পর থামিয়ে দেয়া হয়। দুবার কান ধরে উঠ-বস করতেই থামিয়ে দেয়া হয় নারায়ণকে। আর জরিমানার ২০ হাজার টাকা রাখা হয় বাকি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিশুটির মামা প্রথমে জরিমানার টাকা বাকি রাখার কথা স্বীকার করলেও হঠাৎ করে একটু পরেই আবার তা অস্বীকার করেন। অন্যদিকে ওই বিচারে অংশ নেওয়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জরিমানার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি পরিমল কান্তি গোস্বামী সাংবাদিকদের জানান, নারায়ণ চন্দ্র গৌড়কে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছ। এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে বলেও তিনি জানান।