আজিজুল ইসলাম, মৌলভীবাজার: কুলাউড়ার কালিটি চা-বাগানে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত গাছ কাটার অজুহাতে বন বিভাগের অনুমোদন ছাড়াই নির্বিচারে গাছ কাটা চলছে। বাগান কর্তৃপক্ষ বিভিন্নজাতের গাছ ৫০ লাখ টাকায় সরকারদলীয় কয়েকজন নেতার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে বলে জানা গেছে।
বাগানের শ্রমিকদের তথ্য অনুযায়ী, কুলাউড়া উপজেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক ও স্থানীয় কুলাউড়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, পৃথিমপাশা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য কিবরিয়া হোসেন খোকন মেম্বারসহ আরও কয়েকজন এসব গাছ বাগান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকায় কিনেছেন। তারা এখন শ্রমিক দিয়ে গাছ কাটাচ্ছেন।
সরেজমিন বাগানের বিভিন্ন সেকশনে গেলে দেখা যায়, বিভিন্ন জাতের বেশ কিছু গাছে সবুজ কালি দিয়ে ‘ক্রস’ চিহ্ন দিয়ে রাখা। ১০ নম্বর সেকশনে রাস্তার পাশে ১০-১৫টি আকাশমণি জাতের গাছ কেটে ফেলে রাখা। চার-পাঁচজন জন শ্রমিককে কুড়াল দিয়ে গাছের গোড়া কাটতে দেখা যায়। পরে এসব গাছ তারা করাত দিয়ে চেরাই করে টুকরা করছেন।
ক’জন শ্রমিক জানান, সোমবার (১৮ মে) থেকে তারা গাছ কাটার কাজ শুরু করেছেন। প্রথম দিন ১০-১২টি গাছ কাটা হয়েছে। এসব গাছ চেরাইয়ের জন্য করাতকলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাগানের অন্তত দুই সহ্রসাধিক গাছে ‘ক্রস’ চিহ্ন দেওয়া আছে। পর্যায়ক্রমে সব গাছ কাটা হবে। এতে আরও ১০-১৫ দিন সময় লাগবে। এসব শ্রমিকরা তাদের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন।

বুধবার (২০ মে) কর্মধা ও পৃথিমপাশা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নূর হোসেন ও বন বিভাগের কুলাউড়া রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কশেম ভূঁইয়া সরেজমিনে কালিটি বাগানে যান এবং গাছ কাটার সত্যতা পান। তারা ২০-২৫টি কাটা গাছ জব্দ করেন।
বন বিভাগের একটি সূত্র জানায়, কালিটি বাগান কর্তৃপক্ষ দু সহস্রাধিক গাছ কেটে ফেলার অনুমতি পেতে প্রায় দু বছর আগে বন বিভাগে আবেদন করে। তবে অনুমতি মেলেনি।
বাগানের শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি রামু রায় ক্ষোভের সঙ্গে জানান, বাগান থেকে অবাধে ছায়াবৃক্ষ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে চা-গাছের খুব ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থা চললে বাগানটি ধ্বংস হয়ে যাবে।
গাছ ক্রেতা কিবরিয়া হোসেন খোকন মেম্বার জানান, গাছ কেনার ব্যাপারে বাগানের ম্যানেজারের (ব্যবস্থাপক) সঙ্গে এখনো দরকষাকষি চলছে।
মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, কালিটি বাগানে সাম্প্রতিক ঝড়ে কিছু গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলোসহ আরও কিছু গাছ কয়েকজন মিলে কিনেছি। অনুমোদন ছাড়া গাছ কাটার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে সংবাদ পরিবেশন না করার অনুরোধ করেন।
কালিটি চা বাগানের ব্যবস্থাপক রবিউল হাসান দাবি করেন, ঝড়ে কিছু গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলো কাটানো হচ্ছে কি না তারা জানা নেই। বাগানের বিভিন্ন সেকশনে গাছে ক্রস চিহ্ন দিয়ে রাখার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সাক্ষাতে বিস্তারিত বলবেন বলে জানান।
কুলাউড়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাজমুল হাসান জানান, কালিটিতে গাছ কাটার ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। তদন্ত করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, গাছ কাটার ব্যাপারে কালিটি বাগান কর্তৃপক্ষকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। তিনি বিষয়টির খোঁজ নিবেন বলে জানান।