জাহিবা হোসাইন, মংলা (বাগেরহাট): সিএন্ডএফ মালিক ও কর্মচারীদের অব্যাহত ধর্মঘটে মংলা বন্দরের জেটির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। মংলা বন্দর জেটি এলাকা দিয়ে পণ্য আমদানি-রফতানির সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে বন্দর জেটি থেকে আমদানি পণ্যের চালান খালাস কিংবা ডেলিভারি বন্ধ রয়েছে। ফলে এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে কাস্টমস শুল্ক বিভাগ।
মংলা বন্দর থেকে আমদানি-রফতানি করা পণ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে হয়রানি ও নাজেহালের অভিযোগ তুলে গত বুধবার থেকে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছে সিএন্ডএফ এজেন্টস মালিক ও শ্রমিক-কর্মচারীরা। কাজ না থাকায় প্রায় দুই হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন এবং পরিবার পরিজন নিয়ে দুরাবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
এদিকে ধর্মঘটের পঞ্চম দিনে রবিবার সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত বন্দর জেটি সংলগ্ন কাস্টমস শুল্ক ভবনের সামনে বিক্ষোভ মিছিলসহ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে শ্রমিকরা। অবিলম্বে দাবি মেনে নেওয়া না হলে বন্দর অচলসহ কঠোর কর্মসূচি গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশন ও কর্মচারী ইউনিয়নের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন খুলনা চেম্বার অব কমার্সসহ বিভিন্ন সংগঠন।
মংলা বন্দর কাস্টমস ক্লিয়ারিং এ্যান্ড ফরওয়াডিং এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশন ও কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাদের অভিযোগ, মংলা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে অধিক কালক্ষেপণের কারণে পণ্যের গুণগতমান নষ্ট, আমদানি ও রফতানি কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়িক ক্ষতি ও ঝুঁকি এবং শ্রমিকরা আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে মালামাল সরবরাহ করতে না পারায় ব্যবসায় চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন মংলা বন্দর ব্যবহারকারীরা। গত পাঁচ দিনের ধর্মঘটে জেটির কার্যক্রম বন্ধ থাকায় গড়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার।
বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিএন্ডএফ’র মালিক ও কর্মচারীদের ধর্মঘট না হলে মংলা বন্দর জেটি থেকে গত চার দিনে প্রায় এক হাজারেও বেশি কন্টেইনার লোডিং হতো এবং মালামাল বোঝাই করা কন্টেইনার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তা খালাসের জন্য চলে যেত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন্দরের এক কর্মকর্তা জানান, চলমান এ ধর্মঘটের কারণে মংলা বন্দর জেটিতে আমদানি পণ্যের ১ হাজার ৪শ’ এবং রফতানিযোগ্য পণ্যের ৮শ’ কন্টেইনার আটকে আছে। একইভাবে হিমায়িত চিংড়িসহ রফতানিযোগ্য পণ্য আর্ন্তজাতিক বাজারে পাঠানোর প্রক্রিয়াও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, কন্টেইনার পরিবহনের জন্য এ সপ্তাহে ২টি সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজ আসার সিডিউল রয়েছে তাদের কাছে। তবে সিএন্ডএফ মালিক-শ্রমিকদের এ আন্দোলন অব্যাহত থাকলে ওই দুটি বাণিজ্যিক জাহাজের আসাও অনিশ্চিত হতে পারে। এতে ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হবেন। ধর্মঘটের কারণে দেশী-বিদেশী কন্টেইনার জাহাজও বন্দর জেটিতে ভেরার সিডিউল পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনার দেখা দিয়েছে। তবে মংলা বন্দরে বর্তমানে ৯টি দেশী-বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে। এ জাহাজগুলো বন্দরের হাড়বাড়িয়া ও বহিঃনোঙ্গরে অবস্থান করে মালামাল বোঝাই ও খালাস করছে। এছাড়া একটি মেশিনারিজ (মেশিনের যন্ত্রাংশ) জাহাজ বন্দর জেটিতে নোঙ্গর করে মালামাল খালাস করছে বলে জানান, বন্দরের হারবার বিভাগ।
সিএন্ডএফ এজেন্টস এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান টিটো জানান, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশন, বাগেরহাট চেম্বার, খুলনা চেম্বার অব কমার্স ও মংলা বন্দর ব্যবহারকারী সমন্বয় পরিষদসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন আমাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। এছাড়া সন্ধ্যায় সকলকে নিয়ে জরুরি বৈঠক করবে সমন্বয় পরিষদের নেতারা। গত শনিবার বিকেলে ও রবিবার সকালে মংলা বন্দরে সিএন্ডএফ মালিকদের ধর্মঘটের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে আবুল কালাম ও মোঃ জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে মিছিল ও সমাবেশ করেছে শ্রমিক-কর্মচারীরা। সমাবেশে শ্রমিকরা দাবি জানান, কাজ না থাকায় তারা বেকার হয়ে পড়েছেন এবং পরিবার পরিজন নিয়ে দুরাবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। সিএন্ডএফ এজেন্টস এ্যাসোসিয়েশনের দাবি বাস্তবায়ন ও চলমান সমস্যাগুলো অচিরেই সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি। তারা এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ এ দাবি জানান।
এছাড়া মংলা বন্দর ব্যবহারকারী সমন্বয় কমিটির আহ্বানে শনিবার অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন মালিক গ্রুপের সম্মেলন কক্ষে আলহাজ্ব সৈয়দ মোস্তাহেদ আলীর সভাপতিত্বে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন মংলা কাস্টমস ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস এ্যাসোসিয়েশনের খুলনা বিভাগীয় অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন মালিক গ্রুপ, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি, মংলা বন্দর মাস্টার স্টিভেডরস এ্যাসোসিয়েশন এবং শিপিং এজেন্টস এ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ। সভায় মংলা কাস্টমস ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস এ্যাসোসিয়েশনের ধর্মঘটের প্রতি সমর্থন জানানো হয়।
এছাড়া অবিলম্বে কাষ্টমসের মংলা বন্দর ইউনিটের সহকারী কমিশনার সাইফুর রহমানসহ কতিপয় কর্মকর্তার রূঢ় আচরণ এবং মংলা বন্দরে আমদানিকারকদের অহেতুক হয়রানি বন্ধের জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নিকট আহ্বান জানানো হয়। এর আগে গত শুক্রবার সিএন্ডএফ এজেন্টস এ্যাসোসিয়েশন ও কর্মচারী ইউনিয়নের দাবির সাথে সমর্থন জানান বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এ্যাসোসিয়েশন (বিএসএএ)’র চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ারুল হক তারিক।
এ ব্যাপারে মংলা কাস্টমস হাউসের (বন্দর ইউনিট) সহকারী কমিশনার সাইফুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য না করে এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।