দূষণ দখলে বগুড়ার ভাদাই নদী এখন মরা খাল

প্রতিনিধি, বগুড়া: শুধু মানচিত্রেই টিকে রয়েছে বগুড়ার ভাদাই নদীর নাম। বাস্তবে এ নদীটি এক যুগ আগেই দখল আর দূষণে মরা খালে পরিণত হয়েছে। এক সময় এ নদীর পানি দিয়ে চাষবাদ হলেও এখন নদীর দুর্গন্ধযুক্ত পানি স্থানীয়দের কাছে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। আবার নদীটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় আসছে বর্ষা মৌসুমে শাজাহানপুর উপজেলার মাঝিড়া, খড়ণা, আড়িয়া, আশেকপুর, গোহাইল — এ পাঁচটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছেন ওইসব ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা। এ কারণে ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। নদীটি রক্ষায় সরকারের দ্রুত কার্যকর হস্তক্ষেপ চেয়েছে এলাকাবাসী।

vadai pic-3
নদীটি এক যুগ আগেই দখল আর দূষণে মরা খালে পরিণত হয়েছে।

বগুড়া শহর থেকে মাইল পাঁচেক দক্ষিণ-পশ্চিমে শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের সাবরুল বিল থেকে শুরু হয়ে আঁকাবাঁকা পথে খড়ণা ইউনিয়নের কুন্দুদেছমা, শিবদেছমা সাতকাউনিয়া, দেছমা, ভাদাইকান্দি, লতাগাড়ি, গোহাইল ইউনিয়নের গোহাইল, মাঝহাটা এবং গোহাইল-খড়ণা ইউনিয়নের সীমানা শেরপুর, নন্দীগ্রাম ও সিংড়া-শেরপুর উপজেলার সীমানা বরাবর প্রবাহিত হয়ে সিরাজগঞ্জ জেলার চলনবিল অঞ্চলে নদীটি পড়েছে। এর একাংশ করতোয়া নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। ভাদাই নদীটির দৈর্ঘ ১৭ মাইল।

সরকারি সিএস রেকর্ডে ভাদাই বা ভদ্রবতি নাম থাকলেও নদীটি ছোট বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে বদিয়ান বা ভাদাই খাল নামে পরিচিত। এ খালের পানি দিয়ে কৃষকেরা এক যুগ আগেও চাষাবাদ করত। এতে অল্প খরচেই ফসল উৎপাদন সম্ভব হতো। কিন্তু বগুড়া শহরের কল-কারখানা, নর্দমার বিষাক্ত পানি নিয়মিত ভদাই নদীতে মেশার ফলে নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে কালো বর্ণ ধারণ করেছে।

এ নদীর পানি সেচের অযোগ্য হয়ে পড়ায় নদীপাড়ের কৃষকেরা চাষবাদ ছেড়ে দিয়েছে। শাজাহানপুর উপজেলা এবং বগুড়া শহরের দক্ষিণাংশ অর্থাৎ ফুলদীঘি, বনানী এবং গন্ডগ্রামের নিচু এলাকায় এখন আর চাষআবাদ করছেন না কৃষকরা। গন্ডগ্রাম এলাকার কৃষক আব্দুস সামাদ বলেন, জমিতে চাষবাদ ছেড়ে দিয়েছি। এক সময় ভাদাই নদীর পানি দিয়ে সেচ দেওয়া হতো। এখন নদীতে পানি থাকে না। আর সবসময় কলকারখানার বর্জ্য প্রবাহিত হয়।

মাঝিড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বলেন, এটি এখন মানচিত্রের নদী। বাস্তবে মরা খাল। দখলের কবলে পড়ে দিনদিন সরু হয়ে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে মাঝিড়াসহ আশেপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের নিচু এলাকা ডুবে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।

শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুবাইয়েত খান বলেন, ইতিমধ্যেই নদীটির বেদখল হয়ে যাওয়া কিছু অংশ উদ্ধার করা হয়েছে। সীমানা নির্ধারণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড আর পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যকর ভূমিকায় নদীটি রক্ষ করা সম্ভব বলে মনে করেন স্থানীয় জনগণ।