জাকির হত্যা মামলা নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগঃ পিস্তলসহ আটক ফারুক ৩ দিনের রিমাণ্ডে

খুলনা থেকে সোহরাব হোসেন: দলিল লেখক সমিতির কেন্দ্রীয় যুগ্ন মহাসচিব খান জাকির হোসেন হত্যা মামলায় চরমপন্থী জিএম ফারুক হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। অপরদিকে এক আওয়ামী লীগ নেতা দাবি করেছে জাকির হোসেন হত্যা মামলা নিয়ে দলের মধ্যে একটি মহল প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গভীর ষড়যন্ত্র করছে। ফলে তিন বছর পার হয়ে গেলেও তদন্তে কোনও অগ্রগতি নাই।

২০১২ সালের ২০ মে খুলনা কালেকক্টরেট ভবনের সামনে অবস্থিত কেসিসি মার্কেটে নিজ কার্যালয়ের সামনে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন খান মো: জাকির হোসেন। ঘটনার পর পরই নিহত স্ত্রী জামিলা খাতুন বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের নামে হত্যা মামলা দায়ের করে। কিন্তু তিন বছর পার হয়ে গেলেও এই মামলায় দ্রুত চাজশীট হবার কোনও লক্ষণ নেই। গত চার মাস মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে খুলনা সিআইডি পুলিশ পরিদর্শক মীর আতাহার আলী।

তিনি জানান, তার আবেদনের প্রেক্ষিতে খুলনা থানায় অস্ত্রসহ আটক জিএম ফারুককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেছে মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালত। বুধবার ফারুককে কারাগার হতে আনার সম্ভবনা রয়েছে। তিনি আরও জানান, দলিল লেখক জাকির হোসেন হত্যা মামলায় পিস্তলের ৯ এম এম গুলি ব্যবহার করা হয়েছিল। আর জি এম ফারুক এবং বন্দুকযদ্ধে নিহত আল মামুন ওরেফে সবুজ ওরফে শীপনের কাছে যে তিনটি পিস্তল উদ্ধার হয়েছে সেটি ৯ এম এম পিস্তল। তিনি দাবি করেন খান জাকিকের দেহ হতে উদ্ধার করা গুলি এবং উদ্ধার হওয়া পিস্তলের ব্যালেষ্টিক পরীক্ষা করলে অনেকটা  পরিস্কার হয়ে যাবে যে এই অস্ত্রে ঐ গুলি ব্যবহৃত হয়েছিল কিনা।

সিআইডি কর্মকর্তা আরও জানান, মামলার বাদী পক্ষ এবং সাক্ষীদের মতে ঘুরে ফিরে জাকির হত্যাকাণ্ডের সাথে আওয়ামী লীগ নেতা বাহাউদ্দিনের নাম প্রকাশ পাচ্ছে, তবে তাকে আটকের মত কোনও তথ্য প্রমান এখনও পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে হত্যাকারী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

এদিকে পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, চারটি অস্ত্রসহ আটক জিএম ফারুক হোসেন পেশাদার অপরাধী। তাকে ইতিপূর্বে খুলনা থানা পুলিশ ৭দিন রিমাণ্ডে এনেও কিছু বের করতে পারেনি। কারণ হিসাবে এই সূত্র জানায়, কারাগার থেকে আসার সময় এক ধরনের ট্যাবলেট খেয়ে আসে যার ফলে ঘন ঘন পায়খানা হয়। খুলনা থানায় রিমাণ্ডে এসে জি এম ফারুক হাজত ঘরে পায়খানা করে কাপড় নষ্ট করে ফেলেছিল, ফলে পুলিশ জিজ্ঞসাবাদ ছাড়াই কারাগারে ফেরত দিতে বাধ্য হয়। তবে পুলিশের বন্দুকযদ্ধে নিহত আল মামুন সবুজ ওরফে শিপন এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে অনেকেই সনাক্ত করেছে।

যুবলীগ নেতা ট্যাংকি শাওন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করেছে নিহত আল-মামুন ওরফে শিপন এবং জিএম ফারুক তাকে হত্যার জন্য আসছিল। তবে পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, বন্দুকযদ্ধে নিহত হবার আগে আল মামুন ওরফে সবুজ স্বীকার করেছিল আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতাকে হত্যার জন্য তাদেরকে একই দলের প্রভাবশালী অপর একটি গ্রুপ ভাড়া করেছিল। আল মামুন বিকালে অস্ত্রসহ আটক হবার পর সন্ধ্যায় বন্দুকযদ্ধে নিহত হয়।

এদিকে ১৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন খন্দকার দাবি করেন, দলিল লেখক খান জাকির হোসেন হত্যায় যে জড়িত তা পুলিশ তদন্ত করে বের করুক, তবে আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ এই হত্যা মামলাতে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে চাইছে। যে কারণে মামলার প্রকৃত তদন্ত থমকে গেছে। তিনি আরও দাবি করেন তার দলীয় এবং ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষরা তাকে জাকির হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করতে দেন দরবার করছে।

এ ব্যাপারে সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বিশ্বাস জানান, দীর্ঘ তিন বছর ধরে জাকির হত্যা মামলার তদন্ত শেষ না হওয়াটা দুঃখজনক। তিনি বলেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে এ ব্যাপারে দলীয় কোন হস্তক্ষেপ নেই। তিনি প্রকৃতজড়িতদের খুঁজে বের করার  আহবান জানান।

অপরদিকে পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, মূলতঃ আওয়ামী লীগে যোগদান করার পর আততায়ীর গুলিতে নিহত দলিল লেখক হত্যার তদন্ত নিয়ে সরকারি দলে বিভক্তির জন্য অগ্রগতি নেই। ইতিমধ্যে যে ৮জনকে আটক করা হয়েছে তার ৭জনই নিরীহ এবং প্রতিপক্ষের আক্রোশের শিকার বলে সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত।