দক্ষিণ এশিয়ার দারিদ্র্য ও খাদ্যঝুঁকি দূর করার জন্য সার্ক বীজ ব্যাংক চালু করা দরকার। সার্কের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে মানসম্মত বীজ উৎপাদন ও বিনিময়ের উদ্দেশ্যে ২০১১ সালে সার্ক বীজ ব্যাংক চুক্তি সম্পাদন করা হয়। ইতোমধ্যেই পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও মালদ্বীপ সার্ক বীজ ব্যাংক চুক্তি অনুস্বাক্ষর করায় বক্তারা ধন্যবাদ জানান এবং আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য সভার মধ্য দিয়ে বীজ ব্যাংক কার্যকরের দাবি জানান।
রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই ভবনে দক্ষিণ এশীয় খাদ্য অধিকার সম্মেলনে খানি-বাংলাদেশ, কেন্দ্রীয় কৃষক মৈত্রী, এশীয় কৃষক সংগঠন (আফা), এশীয় খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (এএফএসএন), আন্তর্জাতিক খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (আইএফএসএন), ইনসিডিন বাংলাদেশ ও একশনএইড আয়োজিত বীজ ব্যাংক বিষয়ক কর্ম-অধিবেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
অধিবেশনে ধারণাপত্র পাঠ করেন উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন)-এর প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী। অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য কাজী রোজী, সার্ক এগ্রিকালচারাল সেন্টারের সিনিয়র প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট ড. টায়ান রাজ গুরুং, ইতালির আলবার্টা গুয়েরা, ভারতের হর্ষ মান্দের এবং পাকিস্তানের ড. মোহাম্মদ মুসা। অধিবেশনটি সঞ্চালনা করেন আইএফএসএন-এর নির্বাহী সদস্য রতন সরকার।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সার্ক বীজ ব্যাংক চুক্তিতে স্থানীয় জাতের বীজের স্বীকৃতি দেওয়া হলেও হাজার হাজার বছর ধরে যেসব কৃষক এই জাতগুলো উন্নয়ন, বিনিময় ও সম্প্রসারণ করছেন তাদের কোনো স্বীকৃতি ও অধিকার দেওয়া হয়নি। সার্ক বীজ ব্যাংক বোর্ডে মাত্র এক জন কৃষক প্রতিনিধি রাখা হয়েছে, অথচ বীজ কোম্পানি প্রতিনিধি রাখা হয়েছে দু’জন। অপরদিকে নাগরিক সমাজের কোনও প্রতিনিধি বোর্ডে রাখা হয় নি। বক্তারা বীজ ব্যাংক বোর্ডে কমপক্ষে তিন জন কৃষক প্রতিনিধি ও এক জন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি রাখার দাবি জানান।
বক্তারা আরো বলেন, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মেধাস্বত্ব আইনের ঘোরপ্যাঁচে ফেলে বীজ কোম্পানিগুলো ক্রমশই কৃষকের হাত থেকে বীজের অধিকার ছিনিয়ে নিচ্ছে। জাতিসংঘের প্রাণবৈচিত্র্য সনদ ও আদিবাসী অধিকারের ঘোষণাপত্রই পারে কৃষকদেরকে এই আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে। কিন্তু বীজ ব্যাংক চুক্তিতে মেধাস্বত্বাধিকারের কথা উল্লেখ করা হলেও প্রাণবৈচিত্র্য বা আদিবাসী অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। বক্তারা সীমান্ত নির্বিশেষে কৃষকদের মধ্যে পারস্পরিক জ্ঞান ও বীজ বিনিময়ের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য কৃষক পর্যায়ে আঞ্চলিক গবেষণা ও বীজ সম্প্রসারণের অধিকার প্রদানের দাবি জানান।
অধিবেশনে অন্যান্যের মধ্যে আলোচনা করেন কেন্দ্রীয় কৃষক মৈত্রীর সাবেক সভাপতি মনির হোসেন, কেয়ারের আশরাফুজ্জামান, কৃষক জয়নুল বিশ্বাস, নারী কৃষক মুর্শিদা খাতুন, ভারতীয় প্রতিনিধি ব্যোমকেশ, কেনিয়ান প্রতিনিধি জাস্টাস লেভি, পাকিস্তানি প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ জাভেদ, এএফএসএনের সমন্বয়কারী আহমেদ বোরহান ও খানির সমন্বয়কারী কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম প্রমুখ। – সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।