শেরপুরের গারো পাহাড়ে দুগ্ধ খামার গড়ে তোলার উজ্জ্বল সম্ভাবনা

শেরপুর থেকে রেজাউল করিম বকুল: শেরপুরের গারো পাহাড়ে গড়ে উঠতে পারে শতাধিক দুগ্ধ খামার। এখানে সরকারি ও বেসরকারি কয়েক হাজার একর জমি পতিত রয়েছে। প্রাকৃতিকভাবেই এসব জমিতে গড়ে ওঠেছে আগাছা। এগুলো গো খাদ্যের চাহিদা মেটায়। এ ছাড়াও রয়েছে বিশাল বিচরণ ভূমি। এ জন্য গারো পাহাড়ে হতে পারে বিশাল দুগ্ধ খামার।

Garo Paher - 4
স্থানীয় অনেকে গাভী পালন করে সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছেন

স্থানীয় অনেকে গাভী পালন করে সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছেন। পুঁজির অভাবে উন্নত জাতের গাভী দিয়ে দুগ্ধ খামার গড়ে তোলা তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এখানে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ ও সহযোগিতায় উন্নত জাতের গাভী দিয়ে দুগ্ধ খামার ও প্রক্রিয়াজাত করণ কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব। এতে স্থানীয়ভাবে দুধের চাহিদা মিটিয়েও বছরে কোট কোটি টাকার প্রক্রিয়াজাতকরণ দুধ রফতানি করা যেতে পারে বলে মনে করেন পশু সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও স্থানীয় কৃষকেরা। সম্প্রতি অনুসন্ধানে গিয়ে স্থানীয় লোকজন, কৃষক ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতের সীমান ঘেঁষা শেরপুরের  শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার উত্তর সীমানা। এর পাশ ঘেষেঁ বিশাল এলাকাজুড়ে গারো পাহাড়। এ পাহাড়ে সরকারি ও বেসরকারি প্রায় ১৫/১৬ হাজার একর জমি পতিত। দুধ উৎপাদনে এখানে রয়েছে উজ্জল সম্ভাবনা। অথচ দেশে দুধের চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে শতশত কোটি টাকার গুড়া দুধ। প্রায় অর্ধশত ব্রান্ডের গুড়া দুধ বাজার দখল করে রেখেছে। দেশে উৎপাদিত দুধের চাহিদা চার ভাগের একভাগও নয় বলে সম্প্রতি গুড়া দুধ বাজারজাতকরণের একাধিক এজেন্ট ও বিক্রেতাসহ একাধিক সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

পশু সম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গারো পাহাড়ে কমপক্ষে সাড়ে ৭ লাখ গরু রয়েছে। ছাগলের সংখ্যা হবে কমপক্ষে তিন লাখ। ভেড়া অর্ধ লক্ষাধিক। তথ্য মতে, গারো পাহাড়ে বিপুল পরিমানের অনাবাদী জমি। এখানে সরকারি বা বেসরকারিভাবে গড়ে উঠতে পারে শতাধিক দুগ্ধ খামার। উৎপাদিত হতে পারে কোটি কোটি টাকার দুধ। জনপদের বেকারদের জন্য সৃষ্টি হতে পারে কর্মসংস্থানের নতুন পথ। এতে বৈদেশীক মুদ্রা আয়ে যোগ হবে নতুন মাত্রা। এক সময় গারো পাহাড় হয়ে ওঠতে পারে ডেইরি ও পোল্ট্রি এলাকা।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, তাদের উন্নত জাতের গাভী ক্রয় করার মতো সামর্থ্য নেই। তাই তারা দেশি জাতের ২০/২৫ টি করে গাভী পালন করে সংসার চালাচ্ছেন। তাদের মতে, পাহাড়ের প্রাকৃতিক খাদ্য বিনামূল্যে পাচ্ছেন। এ জন্য অনেকে গাভী পালন করে সংসারে এনেছেন স্বচ্ছলতা। তবে উন্নত জাতের গাভী পালন করা হলে আরো বেশি লাভবান হতে পারবেন বলে মনে করেন তারা। শ্রীবরদী উপজেলার গারো পাহাড়ের বাবেলাকোনা গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম, বালিজুরি গ্রামের সাহেব আলী, ঝিনাইগাতীর রাংটিয়া গ্রামের ভূপেন সাংমাসহ অনেকে জানান, তাদের উন্নত গাভী ক্রয়ের টাকা নেই। তাই তারা দেশি গরু দিয়ে খামার করে কোনো মতে সংসার চালাচ্ছেন। তবে তাদের মতে, উন্নত জাতের গাভী পালনে আরো বেশি লাভ হবে বলে মনে করেন তারা। ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়ের পশু পল্লী চিকিৎসক ছামিউল হক, আব্দুল খালেক, ওষুধ ব্যবসায়ী জাকীর হোসেনসহ অনেকে বলেন, এখানে সরকারিভাবে ডেইরি খামার হলে বছরে কোটি কোটি টাকার দুধ উৎপাদন সম্ভব। দেশে দুধের চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রফতানি সম্ভব। তাছাড়া শতশত বেকার ছেলেরা পাবে কর্মসংস্থানের পথ। শ্রীবরদী উপজেলা পশু সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুর রউফ বলেন, একটি পশু মাথা পিছু গড়ে ২ কেজি বিচালি ও কাঁচা ঘাঁষসহ আধা কেজি করে খৈল, খেসারির ডাল, ধান, গমের কুড়া ও চিটা গুড় প্রয়োজন। তাদের মতে, বিদেশী ল্যান্ড সেভার জাতের ঘাস চাষ হচ্ছে। এটি ৮ হতে ১০ দিনের মধ্যেই গো খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। জমিও নষ্ট হয় না। এতে গো সম্পদ উন্নয়ন ছাড়াও দেশব্যাপী দুধের ঘাটতি পূরণে ব্যাপক সহায়ক হবে। এখানে আধুনিক পদ্ধতিতে গোচারণ ভূমি গড়ে তুলে দুধ আহরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ করা জরুরি। এ দিয়ে দেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটানো সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।