খুলনা প্রতিনিধি: খুলনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোচিংয়ের নামে ডিজিটাল জালিয়াতি হচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব হলেও কোনো প্রতিকার নেই। খুলনায় ইউসিসি কোচিংয়ের দু’টি শাখা মিথ্যা ছবি ও ভুল তথ্য দিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে প্রতারণা করছে। এসব প্রতারণা করে উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রার্থীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
তাদের এ প্রতারণার চিত্র ফুটে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শাখা (ঢাকা) ও খুলনা শাখার প্রসপেক্টাস, ব্যানার, ব্রেকিং নিউজের নামে লিফলেট, ফেস্টুন, প্যানা ও পোস্টারের ছবিতে।
Zঅনুসন্ধানে জানা যায়, ইউসিসি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং, যাদের সারাদেশে সর্বমোট ১০৭টি শাখা রয়েছে। ঢাকা শাখার ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক, খ ও গ ইউনিটে ভর্তির সুযোগপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের ছবি ফটোশপের মাধ্যমে কাজ করে একই শিক্ষাবর্ষে খুলনার দু’টি শাখার প্রসপেক্টাসে দেখানো হয়েছে।
এতে ঢাকা ইউসিসি এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ড. এম. এ. হালিম পাটওয়ারীর ছবির স্থলে খুলনার দু’টি শাখার পরিচালক সরোয়ার হোসেনের ছবি বসানো হয়েছে। আর প্রসপেক্টাসে একই শিক্ষার্থীদের ছবি রয়েছে। যারা আদৌ খুলনার দু’টি শাখা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভতির সুযোগ পায়নি।
খুলনা শাখার পরিচালক ঢাকার সাফল্য নিজের শাখা দু’টির (খুলনা ও দৌলতপুর) হাজার হাজার প্রসপেক্টাস, ব্যানার, ফেস্টুন, প্যানা ও পোস্টারে দেখিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আকৃষ্ট করছেন।
শাখা দু’টি থেকে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রসপেক্টাসে দেখানো হচ্ছে ৩৮১ জন। অথচ এ দুটি শাখা থেকে হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এগুলো খুলনা বিভাগের ১০জেলার সর্বত্র বিলি করে ছড়ানো হচ্ছে। এ ডিজিটাল প্রতারণা বুঝতে না পেরে শহর ও গ্রামের শিক্ষার্থীরা প্রতারণার ফাঁদে পা দিচ্ছে।
ঢাকা প্রধান শাখা ও খুলনার দুটি শাখার প্রসপেক্টাস এবং লিফলেট একত্র করে দেখা গেছে, খুলনার পরিচালক সরোয়ার হোসেনের পেছনে দাঁড়ানো টুপি পরিহিত শিক্ষার্থী টঙ্গীর তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রার ছাত্র আব্দুর রহমান মজুমদার। যার ছবি ঢাকা প্রধান শাখার প্রসপেক্টাসের কাভার পেজের প্রথমে ওই শাখার শিক্ষার্থী হিসেবে দেখানো হয়েছে।
একইভাবে খুলনার পরিচালকের বামে বসা শিক্ষার্থী ঢাকা কুইন মেরী কলেজের ছাত্রী তানজিনা হোসেন চৈতী। যার ছবি ঢাকা প্রধান শাখার প্রসপেক্টাসের কাভার পেজের ২য় স্থানে ওই শাখার শিক্ষার্থী হিসেবে দেখানো হয়েছে।
একইভাবে ঢাকা শাখার সুযোগপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সাথে পরিচালকের ছবি সরিয়ে খুলনা শাখার পরিচালকের ছবি দিয়ে সবাইকে খুলনা শাখার শিক্ষার্থী হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে।
কয়েকজন সচেতন অভিভাবক জানান, ব্যক্তি মালিকানাধীন এ কোচিং সেন্টার ইচ্ছা মাফিক বিজ্ঞাপন ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে সাধারণ অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা করছে।
তারা আরও জানান, উচ্চ শিক্ষায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে ভর্তি হওয়ার প্রবণতাকে কাজে লাগিয়ে এ কোচিং সেন্টার তাদের সাথে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই।
খুলনার দু’টি শাখার পরিচালক সরোয়ার হোসেন বলেন, অফিসে আসেন। চা খেয়ে যান। সামনাসামনি কথা বললে সব কিছু বুঝবেন। আমার অনেক শত্রু আছে। যারা আমার ভালো চায় না।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) বিশেষ শাখার এডিসি মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, শিক্ষা নিয়ে প্রতারণা কোনভাবেই কাম্য নয়। জালিয়াতির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।