বগুড়া প্রতিনিধি: সুস্বাধু আর স্বাদে অতুলনীয় দই বলতে বগুড়ার দই। এটি এক বাক্যে যে কেউই বলতে পারে। এই দইয়ের কদর এখন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে এবং দইকে কেন্দ্র করে বগুড়া নতুন পরিচিতি লাভ করেছে।
বগুড়ার দই ব্যবসায়ীদের মতে, বাহারি নামের শতাধিক দোকান থেকে প্রতিদিন প্রায় অর্ধকোটি টাকার দই কেনাবেচা হচ্ছে। সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাশাপাশি পাশের দেশ ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশে বগুড়ার দইয়ের খ্যাতি ছড়িয়েছে।
তবে রফতানিতে দইয়ের বিশাল বাজার তৈরির সম্ভাবনা থাকলেও শুধুমাত্র সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তা সম্ভব হচ্ছেনা।
বগুড়ায় দই’র শুরুটা হয়েছিল নবাব আমলে। সে সময়ে এই দইয়ের নাম ছিল নবাববাড়ীর দই। বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী নবাব পরিবার ও সাতানী পরিবারের কাছে এ দই নবাবি খাবার হিসেবে পরিচিতি ছিল। আর এই দই তৈরি করেছিলেন বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গোয়ালা গৌর গোপাল পাল। প্রথমে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে সরার দই তৈরি করেন। খুব সুস্বাদু হওয়ায় গৌর গোপালের দই ধীরে ধীরে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তবে হিন্দু সম্প্রদায়ের মতে রাধা-কৃষ্ণ জন্মের পর তারা দুধ থেকে তৈরি এক ধরনের খাবার খেত যাকে ওই সময় দধি বলা হতো। এই দধি থেকেই কালক্রমে দই নামকরণ হয়।
স্বাধীনতার পর বগুড়ায় দই তৈরিতে শহরের গৌর গোপালের পাশাপাশি মহরম আলী ও বাঘোপাড়ার রফাত আলীর নাম ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় ছোট ছোট মাটির পাত্রে (স্থানীয় ভাষায় হাঁড়ি) দই ভরানো হতো। ঘোষদের ছোট ছোট দোকান থাকলেও তখনও ফেরি করেই দই বিক্রি হতো। গৌর গোপাল ও মহরম আলীর পর বগুড়ার দই ঘরের মালিক আহসানুল কবির দই তৈরি ও বাজারজাত করণে নতুনত্ব নিয়ে আসেন। তিনিই প্রথম ছোট ছোট পাতিলে দই ভরানো শুরু করেন।
সেই সাথে প্যাকেটিং ও দই সংরক্ষণেও আনেন নতুনত্ব¡। অতি মনোরম ও সুসজ্জিত শোরুম করে দই বিক্রির প্রচলণ করেন তিনি। সেটাও ৯০ দশকের শুরুর দিকে। দই ঘরের ম্যানেজার আবুল খায়ের জানান, তাদের দই দেশের বাইরেও নিয়ে যাওয়া হয়। স্থানীয়ভাবে তারা যে প্যাকেটে দই দেন তা শীতকালে থাকে ৪/৫ দিন। আর গরম কালে থাকে ২/৩ দিন।
উত্তরাঞ্চলে কোন বিদেশি বেড়াতে এলে তারা ফেরার সময় দই কিনে নিয়ে যান। হাতে হাতে করেই এই দই পৌঁছে যায় বিভিন্ন দেশে। তবে বিভিন্ন ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে বগুড়ার দই বিদেশের বাজারে নিয়ে যায়। যেসব দেশে বাংলাদেশী আছে সেখানে তারা দই নিয়ে যায় বিক্রির উদ্দেশে। এর মধ্যে রয়েছে- ইংল্যাান্ড, মালোয়েশিয়া, ভারত, কাতার, সৌদি আরব এসব দেশ। কিন্তু সরকারি সহযোগিতা নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দইয়ের রফতানি হচ্ছে না।
বর্তমানে বগুড়া শহরের এশিয়া সুইট মিট ও দই ঘর, চেলোপাড়ার কুরানু, নবাববাড়ীর রুচিতা, কবি নজরুল ইসলাম সড়কের আকবরিয়া, বিআরটিসি মার্কেটের দইবাজার, মিষ্টিমহল, সাতমাথার চিনিপাতাসহ ৪০/৪৫ টি শো রুমে দই বিক্রি হচ্ছে। আবার শহরের বাইরে বাঘোপাড়ার রফাত, শেরপুরের রিপন দধি ভান্ডার, সৌদিয়া, জলযোগ, বৈকালী ও শুভ দধি ভান্ডার থেকে প্রতিদিন প্রচুর দই বিক্রি হয়।
বগুড়ার দই মিষ্টির দোকান এশিয়া কর্তৃপক্ষ জানান, ওজন দিয়ে তাদের দই বিক্রি হয়না। বিক্রি হয় পিছ হিসেবে। এখন তাদের স্পেশাল সড়ার দাম ১৮০ টাকা, সাধারণ ১১০/৩০ টাকা ও সাদা দই ১২০ টাকা হিসেবে বিক্রি হয়। এখানে দই এর চাহিদা প্রচুর। বেলা ৩ টার মধ্যে দই শেষ হয়ে যায়।
এছাড়া বাজারে কম দামে আরো কিছু বিভিন্ন ব্রান্ডের দই পাওয়া যায়। এসব প্রতি পাতিল বিক্রি হয় ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। ছোট বড় বিভিন্ন আকৃতির মাটির পাত্রে দই ভরানো হয়। আগে কেজি হিসেবে দই বিক্রি হলেও এখন উপকরণনর মূল্য বৃদ্ধি হওয়ার কারণে দই বিক্রি হয় পিছ হিসেবে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ বগুড়া এলে এখানকার দই’র স্বাদ না নিয়ে ফেরেন না। যাওয়ার সময় প্রিয়জনের জন্যও নিয়ে যান বগুড়ার দই।