মৌলভীবাজার থেকে আজিজুল ইসলাম: রাবারকে এক সময় সাদা সোনা বলা হতো। দাম ছিল আকাশ ছোঁয়া। হঠাৎ দরপতনে সেই সাদা সোনা এখন মানুষের গলার ফাঁস। বাগান মালিকরা এতটাই হতাশ যে, বাগান থেকে রাবার গাছ কেটে অন্য গাছ লাগানোর বিকল্প চিন্তা করতে হচ্ছে তাদের।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় সরকারি একটি রাবার বাগান রয়েছে। যার নাম ভাটেরা রাবার বাগান। সেই বাগানকে অনুসরণ করে কুলাউড়ায় বিভিন্ন কোম্পানি চা বাগানের পাশাপাশি রাবার বাগান প্রতিষ্ঠা করেন। সেই তালিকায় রয়েছে এইচআরসি, ফিনলে, ডানকান এবং সিলেটের রাগীব আলীর কোম্পানি। আর ব্যক্তি মালিকানায় ২০-২২টি ছোট বড় রাবার বাগান গড়ে উঠে। এসব রাবার বাগানে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করত। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার রাবার কেনাবেচা হতো। এই শিল্পকে ঘিরে মানুষের স্বপ্নের পরিধিও বাড়তে থাকে। কিন্তু হঠাৎ করে রাবারের দাম কমে যাওয়ায় মালিকদের মধ্যে চরম হতাশার জন্ম দিয়েছে। সেই হাতাশার মাত্রাটা এতই বেশি যে, হতাশ রাবার মালিকরা নিজেদের বাগানের গাছ কেটে অন্য কোনও গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করছেন।
রাবার বাগান মালিকরা জানান, রাবার বাগান প্রতিষ্ঠার পর তারা প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ৩৭৫ টাকায় বিক্রি করেছেন। আর এখন সেই দাম নেমে এসেছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকায়। মাঝে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে। ফলে রাবার বাগান মালিকদের মাঝে দেখা দেয় হতাশা। বর্তমানে উৎপাদিত রাবারে শ্রমিকদের বেতন দেওয়াই দুষ্কর। এমন হতাশার কথা জানালেন বাগান মালিক আব্দুল মতলিব, আনার উদ্দিন, রুশন কামাল এবং সামা মিয়া এন্ড ব্রাদার্সের মালিকরা।
কুলাউড়া উপজেলা রাবার বাগান মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব নজিব আলী ও সাধারণ সম্পাদক একেএম শাহজালাল জানান, এক সময় রাবার কৃষি পণ্য হিসেবে বিপণন হতো। এরপর তা কৃষি পণ্য থেকে বাদ দিয়ে তাতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত করা হয়। কুলাউড়ায় গড়ে উঠা সবক’টি রাবার বাগান মানুষের অনেক কষ্টের। সরকার থেকে এসব বাগান মালিকদের ব্যাংক ঋণ দিয়েও কোনও ধরনের সহযোগিতা করা হয়নি। তাদের এই দুর্দিনে বাগান মালিকদের কিছুটা হলেও সরকারি সহযোগিতা দরকার, নয়তো বাগান কেটে ফেলা ছাড়া আর কিছু করার থাকবে না বলে মালিকরা জানান।