৬৫ ভাগ ক্ষেতমজুরদের বাদ নিয়ে দেশের উন্নয়ন করা যাবে না- সাতক্ষীরায় কম. বিমল বিশ্বাস

সাতক্ষীরা থেকে শরীফুল্লাহ কায়সার সুমন: পল্লী রেশনিং ব্যবস্থা চালু, ভূমিহীন খেতমজুরদের মাঝে খাসজমি বন্টন, ক্ষেতমজুরদের নিবন্ধনসহ সাত দফা দাবিতে শনিবার অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ খেতমজুর ইউনিয়ন, সাতক্ষীরা জেলার শাখার ৩য় জেলা সম্মেলন। সম্মেলনে প্রধান অতিথি সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও কমিউনিস্ট নেতা কমরেড বিমল বিশ্বাস বলেন, মরে গেলেও বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক, জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র হতে দেওয়া হবে না। আমরা দেশের সম্পদ বিদেশীদের হাতে তুলে দিতে পারি না।

satkhira khetmojur union

তিনি আরো বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার ৬৫ ভাগ খেতমজুর। তাদের বাদ নিয়ে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন করা যাবে না। সাতক্ষীরা জেলায় প্রচুর খাসজমি রয়েছে। সেগুলো প্রকৃত ভূমিহীনদের মধ্যে বন্টন করতে হবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে ভূমিহীনের সংখ্যা। ভূমিহীনদের দাবি আদায়ে রাজপথে থাকতে হবে। দাবি আদায়ে সংগ্রাম-আন্দোলনের পথ অনেক রক্তাক্ত। সে আন্দোলন সফল করতে হলে রক্ত ঝরতে পারে। কিন্তু তার পরেও পিছপা হওয়া যাবে না।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান বক্তা কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, দেশের কৃষকরা মজুরি পাচ্ছে না, যদিও তারা জাতীয় অর্থনীতিতে বেশি অবদান রাখছে। সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য মজুরি বোর্ড গঠন করে বেতন বাড়ানো হলেও ক্ষেতমজুরদের নূন্যতম মজুরি ঘোষণা করা হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, সরকার বিভিন্নভাবে গরীব মানুষকে ভিজিএফ কার্ড, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা চালু করলেও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেম্বরের আর্শীবাদপুষ্ট মানুষেরা পাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, জেলায় প্রচুর খাসজমি আছে। সেগুলোর কিছু জায়গায় ভূমিহীনরা বসবাস করলেও জমি দলিল জেলা প্রশাসকের হাতে। তাদের কাছ থেকে দাবি আদায় করতে হলে আন্দোলন সংগ্রাম করতে হবে। তাদের ঘেরাও করতে হবে। দেশ থেকে সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত করে জামায়াত-বিএনপির জঙ্গি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে জেলা শাখার সভাপতি অসিত কুমার রাজবংশি সভাপতিত্ব করেন। সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন জেলা ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক মহিবুল্লাহ মোড়ল, জেলা কৃষক সমিতির আহবায়ক সাবীর হোসেন, অধ্যক্ষ ময়নুল হাসান, ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি বিশ্বনাথ কয়াল, জেলা খেতমজুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্মল মন্ডল প্রমুখ।

সম্মেলনে কমরেড বিমল বিশ্বাস আরও বলেন, জমি, কাজ, মজুরি, পূর্ণ রেশনিং ও খেতমজুরদের রেজিষ্ট্রেশনের দাবিতে ভূমিহীন খেতমজুররা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করার পরও বাজেটে এই সব দাবি সম্পর্কে সরকারের নির্লিপ্ততা ৬৫ভাগ খেতমজুর ভূমিহীনদের প্রতি সরকারের অবজ্ঞার সামিল। জনগণের ব্যাপক অংশকে উপেক্ষা করে রাষ্ট্রীয় কল্যাণ ও জনকল্যাণ হতে পারে না। সরকারের ধনীক তোষণ নীতির ফলে ধনীকদের স্বার্থেই বাজেট বরাদ্দের ব্যাপকতা লক্ষ্য করা যায়। যার ফলে সমাজের কিছু উন্নয়ন হলেও ধনী দরিদ্রের বৈষম্য বেড়েই চলেছে।

সরকার যেহেতু খেতমজুর ভূমিহীনদের সাথে উন্নয়নের পলিসি নির্ধারণে বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে তাই খেতমজুর ভূমিহীনদের আন্দোলনের পথে যাওয়া ছাড়া কোনও বিকল্প পথ নেই। আন্দোলনের পথেই খেতমজুর ভূমিহীনদের দাবি আদায়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

সম্মেলন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন স্বপন কুমার শীল। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনা ও পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলন শুরু হয়।