দিনাজপুর থেকে রতন সিং: দিনাজপুরের দলিত বালিকা মালতি রানী রবিদাস এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেলেও অর্থের অভাবে তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে। মালতির বাড়ি দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ী শাহী মসজিদের সামনে। বাবা সত্য নারায়ণ রবিদাস নিমতলা মোড়ে জুতা সেলাই ও পালিশের কাজ করেন। অনেক কষ্টে চার ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করান তিনি।
মালতি কলেজিয়েট গার্লস হাইস্কুল এ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। অভাবের কারণে প্রাইভেট পড়াটাও ছিল বেশ কষ্টকর। বাড়ির পাশের পরিমল চক্রবর্তী তপন স্যার ছিল তার একমাত্র প্রাইভেট টিউটর। তপন স্যারের কাছে অন্যদের চেয়ে অনেক কম খরচে পড়েছে সে। বেশির ভাগ সময় লেখাপড়া করত বাড়িতে। স্কুলে উপস্থিতি ছিল নিয়মিত। বাড়িতে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত নিজে নিজেই পড়ত মালতি। তাতে তার সাফল্য এসেছে। জিপিএ ফাইভ নিয়ে এসএসসি পাশ করেছে। এখন তার বাবা অর্থের অভাবের মেয়েকে ঠিকমতো পড়াশোনা করাতে পারছেন না। কিন্তু দলিত জনগোষ্ঠীর মেয়ে মালতি রবিদাসের স্বপ্ন রয়েছে চিকিৎসক হওয়ার। কিন্তু অর্থের অভাব বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেই স্বপ্ন পূরণের পথে।
মালতি জানায়, লেখাপড়া করে যদি চিকিৎসক হতে পারি, তাহলে আমাদের দলিত জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করব।
দিনাজপুরে দলিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে আছে রবিদাস, ঋষি, হেলা, বাশফোর, ডোমসহ আরো কয়েকটি সম্প্রদায়। অার্থিক সংকট এ সম্প্রদায়গুলোকে অনেক পেছনে নিয়ে গেছে। তবে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ছেলে-মেয়েদেরকে লেখপড়া করানোর চেষ্টা করছেন সবাই।
মালতির জিপিএ ফাইভ পাওয়া অন্যদেরকে উৎসাহিত করছে। তার বড় ভাই নয়ন রবিদাস দুবার এসএসসি পরীক্ষায় ব্যর্থ হলেও চেষ্টা করছে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে এই ব্যর্থতা দূর করার। তার আরেক ভাই কাঞ্চন রবিদাস এখন ৮ম শ্রেণির ছাত্র। আরেক ভাই সঞ্জয় রবিদাস পড়ছে তৃতীয় শ্রেণিতে।
মালতিদের ঘর-বাড়ি খুবই জীর্ণ-শীর্ণ। একটি মাত্র টিনের ঘরে তাদের বসবাস। বাড়িতে প্রবেশের রাস্তার উপরে টিউবওয়েল বসানো। পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে যাওয়া-আসার পথেই টিউবওয়েল বসাতে হয়েছে।
মালতির মা বিউটি রানী দাস বললেন, ছেলে-মেয়েদেরকে লেখাপড়া করাতে গিয়ে ঘর-বাড়ি ঠিক করতে পারি নাই। তাই একরকম বেহাল অবস্থায় আছি।
মালতির বাবা জানান, প্রতিদিন দেড় দু’শ টাকা কামাই করি। ঐ টাকায় খাবার জোটানোই কঠিন। তার উপর লেখা পড়ার খরচ, কি কষ্টে চলি বুঝতেই পারছেন।
মালতির সাফল্যে তার গোটা পরিবার উৎফুল্ল। তার সমাজের লোকেরাও আনন্দিত। তবে সাফল্যের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা যাবে কি-না, দারিদ্রক্লিষ্ট এই মুচি পরিবার তা জানেনা। মালতির মা বিউটি রবিদাস তার মেয়ের শিক্ষার জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আবেদন জানান।