মংলা (বাগেরহাট) থেকে জাহিবা হোসাইন: পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কচিখালী অভয়ারণ্য কেন্দ্রে কোস্টগার্ডের স্থায়ী ক্যাম্প এবং একটি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন সাগরে মৎস্য আহরণে নিয়োজিত জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে বনবিভাগের একটি রেস্টহাউজে অস্থায়ীভাবে কোস্টগার্ড ক্যাম্পের কার্যক্রম চলছে। এতে বনবিভাগ ও কোস্টগার্ড উভয়েরই কাজকর্ম ব্যহত হচ্ছে। কোস্টগার্ডের স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ হলে জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ দুর্যোগের সময় তারা সেখানে নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারবেন।
প্রতি বছর ইলিশ মৌসুমে সুন্দরবনের কচিখালী সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে প্রায় সহস্রাধিক জেলে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত থাকেন। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাষ পেলেই তারা সাগর ছেড়ে ছুঁটে আসেন কচিখালীতে। কিন্তু তাদের আশ্রয় নেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই সেখানে। এ কারণে একটি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের দাবি সাগর নির্ভরশীল এ সকল জেলেদের। শেল্টারটি নির্মাণ হলে কোস্টগার্ড সেখানে স্থায়ীভাবে তাদের ক্যাম্পও পরিচালিত করতে পারবেন এবং দুর্যোগে সেখানে আশ্রয়ও নিতে পারবেন জেলেরা। তাছাড়া কোস্টগার্ডের স্থায়ী ক্যাম্প হলে বন ও জলদস্যু নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ফলে নির্বিঘ্ন হবে ইলিশ আহরণ।
কচিখালী মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি আ: লতিফ ফরাজী ও সাধারণ সম্পাদক আউয়াল জমাদ্দার জানান, প্রতি বছর মৌসুমের শুরু থেকেই বিভিন্ন এলাকার এক হাজারেরও বেশি জেলে কচিখালী সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে ইলিশ আহরণে নিয়োজিত থাকে। সাগরে ঝড় শুরু হলে জেলেরা ট্রলার নিয়ে কচিখালীতে এসে আশ্রয় নেয়। কিন্তু সেখানে কোনো আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় দুর্যোগের মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদেরকে ওই ট্রলারেই থাকতে হয়। জেলেদের দাবি, কচিখালী অভয়ারণ্য কেন্দ্রের তালতলা এলাকায় একটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র (সাইক্লোন শেল্টার) নির্মাণ করা হলে সেখানে কোস্টগার্ডের স্থায়ী ক্যাম্পও হবে আর দুর্যোগে জেলেরা আশ্রয়ও নিতে পারবে। বনবিভাগ কচিখালীতে কোস্টগার্ডের স্থায়ী ক্যাম্পের বিরোধীতা করছে বলেও অভিযোগ করেছেন ওই মৎস্য সমিতির নেতারা।
পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মো. কামাল আহমেদ জানান, কচিখালী হচ্ছে অভয়ারণ্য এলাকা। এখানে স্থায়ীভাবে কারো অবস্থান করার সুযোগ নেই। বর্তমানে বনবিভাগের একটি রেস্টহাউজে কোস্টগার্ডের অস্থায়ী ক্যাম্প পরিচালিত হচ্ছে। স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন বা সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের বিষয় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ব্যাপার।
কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের (মংলা) জোনাল কমান্ডার মেহেদী হাসান জানান, কচিখালী শুধু অভয়ারণ্য বন নয়, বনদস্যুদেরও অভায়রণ্য। তাই ওখানে যদি একটি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করে স্থায়ীভাবে কোস্টগার্ড ক্যাম্প স্থাপন করা হয় তাহলে দস্যুদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। বর্তমানে বনবিভাগের একটি রেস্টহাউজে নানা সমস্যার মধ্যদিয়ে কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠির মাধ্যমে স্থায়ী ক্যাম্পের দাবি জানিয়েও কোনো ফল হয়নি। বনবিভাগ স্থায়ী ক্যাম্পের বিরোধিতা করছে বলেও তিনি জানান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক সুনিল কুমার কুন্ডু বলেন, সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে কচিখালীতে একটি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হবে। পরবর্তী প্রকল্পে এটি সংযুক্ত করার চিন্তা রয়েছে। একই সাথে বনবিভাগেরও আরো অবকাঠামো নির্মাণ হবে। ওখানে শেল্টার নির্মাণ হলে সবারই উপকারে আসবে।