বাগেরহাট প্রতিনিধি: বাগেরহাটের ঐতিহাসিক খানজাহান আলী (র:) মাজারের দিঘির বিরল প্রজাতির মিটাপানির কুমিরের ডিমে এবারও বাচ্চা ফোটেনি। বিলুপ্তি ঠেকাতে ডিম ফুটানোর বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টায়ও ফল হয়নি। মাজারের দিঘির পাড় এলাকা থেকে সংগ্রহ করে জেলা প্রশাসকের বাংলোয় ইনকুবেটরে এবং জেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরে রাখা ডিমগুলি ৮০ দিন পর অবশেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চা ফুটানোর জন্য সম্ভব সব রকমের চেষ্টা করেও তাতে বাচ্চা ফুটানো সম্ভব হয়নি। দিঘির পাড়ে কুমিরের পেটের নিচে তা দেওয়া ডিম গুলিরও বাচ্চা হয়নি।
বাগেরহাট জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: সুখেন্দু শেখর গায়েন জানান, শত চেষ্টা করেও এ ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানো যায়নি। তাঁর মতে, খানজাহান দিঘির মর্দা কুমিরের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমে যাওয়ায় এবং বয়সের কারণে মর্দা কুমিররের মিলন ক্ষমতা নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন। ফলে মাদি কুমিরের ডিমগুলি নিষিক্ত ছিল না বলে বাচ্চা ফুটেনি। গত ৬ এপ্রির মাজারের দিঘির পাড় এলাকা থেকে কুমিরের পেটের নিচে তা দেওয়া অবস্থায় ২২ টি ডিম সংগ্রহ করা হয়। তার মধ্যে ইনকুবেটরে ১১ টি এবং জেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরে বৈজ্ঞানিক উপায়ে উপযুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করে বাকি ১১ টি ডিম রাখা হয়। এগুলি থেকে বাচ্চা ফুটানোর সব চেষ্ট করেও বাচ্চা ফোটেনি। তাছাড়া, কুমিরের পেটের নিচে তা দেওয়া ডিমগুলি থেকেও কোন বাচ্চা ফোটেনি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রায় সাড়ে ৫শ বছর আগে হযরত খানজাহানের নিজ হাতে ছাড়া কুমির কালাপাহাড় ও ধলাপাহাড়-এর শেষ বংশধর কুমিরটি মারা যাওয়ার পর ২০০৪ সালের ২৬ জুন ভারতের মাদ্রাজ থেকে মার্শ প্রজাতির মিঠাপানির ৬টি কুমির খানজাহান আলীর দিঘিতে ছাড়া হয়। তাদের মধ্যে এখানে একটি মাদী ও একটি মর্দা কুমির বেঁচে থাকে। মা কুমির গত কয়েক বছর ডিম দিলেও কোন বাচ্চা ফোটেনি। তাই এবার ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে ব্যবহার করা হয় কৃত্রিম পদ্ধতি।
খানজাহান আলী মাজারের প্রধান খাদেম শের আলী ফকির জানান, মাজারে এখন যে কুমিরটি রয়েছে তা প্রতি বছর ডিম দিলেও তা থেকে বাচ্চা হচ্ছিলনা। এবার ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছিল।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক ও মাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ জাহাংগাীর আলম জানান, দেশে এ প্রজাতির আর কোন পুরুষ কুমির না থাকায় মিঠাপানির বিলুপ্ত প্রজাতির এ কুমিরের বংশ রক্ষার প্রয়োজনে বর্তমান মর্দা কুমিরটিকে আগামি প্রজনন মৌসুমের আগে প্রাণী সম্পদ বিভাগের সহায়তায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসার মাধ্যমে প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা করা হবে।