আদালতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন নির্যাতিত ছাত্রী

রেজাউল করিম, শেরপুর: শেরপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত বৃহস্পতিবার স্বামীর ষড়যন্ত্রের স্বীকার তারাগঞ্জ ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী সেলিনা বেগমের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেছে।

স্বাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আসামীদের সনাক্ত করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সেলিনা বেগম। এদিন মামলার বাদী নির্যাতিত ছাত্রী ছাড়াও তার বড় বোন ও ভাইয়ের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করে আদালত।

মামলার বিবরনে জানা যায়, ২০১৪ সনের ১৭ জুলাই দুপুরে  নালিতাবাড়ী উপজেলার ফকিরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সদ্য বিবাহিতা স্ত্র্রীকে ঈদের কেনাকাটা করার কথা বলে নকলা উপজেলার চরবাছুর আলগা গ্রামের বাসিন্দা স্বামী নজরুল ইসলাম বুলবুল মোটর সাইকেলে করে মধুটিলা ইকোপার্কে নিয়ে যায়।

ইকোপার্কের প্রধান ফটকে ইজারাদার প্রতিনিধি মোস্তফা কামালের কাছে মোটর সাইকেল রেখে স্বামী-স্ত্রী হাঁটতে হাঁটতে পাহাড়ী টিলায় উঠে ওয়াচ টাওয়ারের সামনে বসে গল্প করতে থাকে। রমজান মাস হওয়ার কারণে সে সময় ইকোপার্কে দর্শনাথী ছিল না।

এরপর স্থানীয় শফিকুল, মনু মিয়া ও ছালামসহ ৪ জন অস্ত্র দেখিয়ে স্বামীর সামনেই মেয়েটিকে টানা হেঁচরা করতে থাকে। এক পর্যায়ে  বখাটের দল  শরীরের কাপড়-চোপর খুলে মেয়েটিকে বিবস্ত্র করে মোবাইলে ছবি তুলতে থাকে।

ছবি ও ভিডিও করা শেষে তাকে ধর্ষন করার চেষ্টা করলে মেয়েটি টিলা থেকে  নিচে ঝাঁপ দেয়। এসময় স্থানীয় এক কৃষক ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ঘটনাটি দেখতে পায় এবং ময়েটিকে উদ্ধার করে পার্কের ভিতরে রেঞ্জ অফিসে নিয়ে আসে।

এ ঘটনার ঘন্টা খানেক পর মেয়েটির স্বামী রেঞ্জ অফিসে এসে ঘটনাটি কাউকে না জানানোর কথা বলে স্ত্রীকে মোটর সাইকেলে করে নালিতাবাড়ী বাজারে রেখে বাড়ী চলে যায়। লজ্জা ও পরিবারের সম্মানহানির ভয়ে ওই ছাত্রী ঘটনাটি  গোপন রাখে।

কিন্তু ২১ জুলাই ২০১৪ সালে মোবাইল ফোনে বখাটেরা মেয়েটির বোন মাকছুদা বেগমকে ফোন করে ঘটনাটি জানায় । তারা মাকছুদার কাছে  ৫০ হাজার টাকা দাবী করে। ওই টাকা না দেওয়ায় তারা ভিডিওটি বিভিন্ন মোবাইলে ছড়িয়ে দেয়।

বিষয়টি জানাজানি হলে ১৩ আগষ্ট মেয়েটি বাদী হয়ে নালিতাবাড়ী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। স্থানীয় এমপি কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ঘটনাটি জানার পর ২৪ ঘন্টার মধ্যে বখাটেদের ধরতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়।

এরপর প্রথমে শফিকুল ও পরে মনুসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আদালতে ১৬৪ ধারায় শফিকুল ঘটনার সাথে ইকোপার্কের ইজারাদার প্রতিনিধি মোস্তফা ও মেয়েটির স্বামী বুলবুলের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে জবানবন্দী দিলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ও পর্নোগ্রাফী নিয়ন্ত্রন আইনে ৫জনকে আসামী করে দু’টি মামলা হয় এবং পুলিশ ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ সনে দুইটি মামলার অভিযোগ পত্র দাখিল করে।

কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্বাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত দোষীদের সাজা নির্ধারন করবে। তিনি বলেন, স্বাক্ষী শুরু হওয়ায় আমরা সন্তোষ প্রকাশ করছি। এ মামলায় জড়িতদের দৃষ্টন্তমূলক শাস্তির আশা করছেন তিনি।

শিক্ষাবিদ ড. সুধাময় দাস বলেন, সেলিনা নির্যাতনের ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। আমরা জড়িতদের সর্বোচ্চ সাজার দাবী করছি।

এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষের পিপি অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া বুলু বলেন, মামলাটি দ্রুত নিস্পত্তি করতে সরকার পক্ষ কাজ করছে। ইতোমধ্যে বাদী, তার বড় বোন ও ভাই স্বাক্ষী দিয়েছে। আলামত হিসেবে জব্দকৃত ভিডিওটি  আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে বলে আশা করছি।