এম. সুরুজ্জামান, শেরপুর: চিকিৎসক সংকট ও হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্তব্যে অবহেলা কারণে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীরা।
এছাড়া ওষুধ সংকট, নষ্ট যন্ত্রপাতি ও হাসপাতাল এলাকায় নেশাখোরদের আড্ডার কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
রোগীরা অভিযোগ করেন, জরুরি বিভাগেও ২৪ ঘন্টা চিকিৎসক পায় না তারা। হাসপাতালের এক্সরে ও আল্ট্রাসোনোগ্রাম মেশিন থাকলেও সেগুলো বিকল । একটি এ্যাাম্বুলেন্স সচল থাকলেও অন্য আরেকটি র্দীঘদিন যাবত বিকল রয়েছে। মুমূর্ষু রোগী এলে পাঠানো হয় শেরপুর সদর হাসপাতালে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হলেও নিয়োগপ্রাপ্ত ডাক্তাররা যোগদান করেই অন্যত্র বদলি হওয়ার চেষ্টা শুরু করেন এবং সুবিধাজনক স্থানে বদলি হয়ে যান।
এছাড়া নার্সসহ অন্যান্য কর্মচারীদেও বিরূদ্ধে কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগ করেছে রোগীরা।
প্রতিদিন অনেক হতদরিদ্র রোগী এখানে আসলেও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র ও চিকিৎসা না পেয়ে বাড়ি ফিরে যান। ওষুধ তো দূরের কথা, চিকিৎসকের দেখা পায় না অনেক রোগী।
হাসপাতাল কর্মকর্তারা জানান, হাসপাতালে চিকিৎসকের পদের সংখ্যা নয়টির স্থলে আছেন ছয়জন। সার্জারি, মেডিসিন, ও আবাসিক চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছয়জন চিকিৎসকও নিয়মিত হাসপাতালে আসেন না।
নিরাপত্তা প্রহরী না থাকায় রাতের বেলা নেশাখোরদের আড্ডার কারণে রোগী, রোগীর স্বজন ও চিকিৎসকদের সমস্যায় পড়তে হয়।
গত ২২ জুন উপজেলার সীমান্তবর্তী কালিনগর গ্রামের খুরশেদ মিয়ার (২৫) মূত্রনালি দিয়ে একটি জোঁক শরীরের ভিতরে প্রবেশ করলে কিছুক্ষণ পর রক্তক্ষরণ শুরু হয় । অবস্থার অবনতি হলে সকাল ১০টায় তাকে ঝিনাইগাতী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। একজন ডাক্তার এসে নার্সকে স্যালাইন পুশ করার কথা বলে চলে যান। এরপর বেলা ৩টা পর্যন্ত কেউ তার খোঁজ নিতে আসেনি। ততক্ষণে রক্তক্ষরণে নিস্তেজ হয়ে পড়ে খুরশেদের শরীর। বিষয়টি ডাক্তারকে জানালে কর্তব্যরত ডাক্তার রোগীকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন।
খুরশেদ মিয়া বলেন, সকাল দশটায় এসে অনেকক্ষন বসে থাকার পর একটি ইনজেকশন দিলেও রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি। বার বার নার্সদের বললেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
অন্য অরেক রোগীর স্বজন সফিকুল মিয়া বলেন, আমি গত রাতে আমার মাকে এখানে ভর্তি করেছি সব ঔষুধ বাইরে থেকে নিয়ে এসেছি।
হাসপাতালের ডেন্টাল সার্জন তাকসিনা ফেরদৌসি বলেন, তার যোগদান করার পর এখন পর্যন্ত তাকে কোনো যন্ত্রপাতি বুঝিয়ে দেয়া হয়নি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সেলিম মিয়া বলেন, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই এসব সমস্যার সামাধান করা হবে।
এ ব্যপারে শেরপুরের সিভিল সার্জন আনোয়ার হোসেন বলেন, অতি দ্রুতই ঝিনাইগাতী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উন্নয়নের কাজ করা হবে এবং ইতিমধ্যেই বখাটেদের উৎপাত বন্ধে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান জানান, হাসপাতাল এলাকায় নেশাখোরদের অবস্থানের বিষয়ে হাসপাতাল কৃর্তপক্ষ কোন অভিযোগ করেননি।