মো. মাহবুবুল আলম মিন্টু, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর): রায়পুর পৌরশহরের মাস্টারপাড়ায় ড্রেন ও রাস্তা নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় নির্মাণের দু-তিন মাসের মধ্যেই রাস্তাটি ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ অবকাঠামো নির্মাণের সময় যথাযথ তদারকিও ছিল না। রাস্তায় সৃষ্ট বহু গর্তের কারণে পথচারীরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
রায়পুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গুণগত মান খারাপ হওয়ায় তারা নির্মাণ কাজ স্থগিত করে ঠিকাদারকে রাস্তাটি পুনরায় নির্মাণ করে দিতে বলেছে। কিন্তু ঠিকাদার কাজ করে না দেওয়ায় পৌরসভা বিল প্রদান স্থগিত রেখেছে।
পৌরসভা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সনের এপ্রিল মাসে রায়পুর পৌরসভা থেকে ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘মাস্টারপাড়া ড্রেন ও রাস্তা’ নির্মাণের জন্য দুটি প্যাকেজে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। লটারিতে কাজ পায় রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদের মালিকানাধীন ‘রশিদ ব্রাদার্স’ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল হায়দার বাবুল পাঠানের মালিকানাধীন ‘বাবুল এন্টারপ্রাইজ’।
এ দুই প্রতিষ্ঠানের হয়ে নির্মাণ কাজ করেন ঠিকাদার ও বিএনপি নেতা বাহার উদ্দিন ওরফে বাহার মেম্বার। কার্যাদেশ পেয়ে ওই সময়েই তিনি কাজটি শুরু করেন। কাজের শুরুতেই নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ও শিডিউল অনুযায়ী কাজ না করায় এলাকাবাসী প্রতিবাদ জানায়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে পৌর কর্তৃপক্ষ নির্মাণ কাজ স্থগিত করে দেয়। সিডিউল অনুযায়ী কাজ ও মান ম্মত নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে ঠিকাদারকে কাজ করার নির্দেশ দেন পৌর মেয়র ও পৌর প্রকৌশলী। কিন্তু কাজটি পুনরায় না করে কাজ শেষ হয়েছে দাবি করে পৌর কর্তৃপক্ষের নিকট বিলের জন্য দেন-দরবার করতে থাকেন ঠিকাদার বাহার। কিন্তু সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যমতে এ পর্যন্ত পৌর কর্তৃপক্ষ ওই কাজের বিল এখনো আটকে রেখেছেন।
মাস্টারপাড়ার বাসিন্দা বাবু সুভাষচন্দ্র রায় সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি বরাদ্দ ‘জলে’ ঢালা হয়েছে। আমরা বার বার অনুরোধ করলেও ঠিকাদার বাহার উদ্দিন আমাদের কথা শুনেনি। পৌর কর্তৃপক্ষও নামকাওয়াস্তে তদারকি করে। কাজের শুরুতে তারা কঠোর ভূমিকা নিলে আজকের এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। দু’দিন আগেও আমি ও আমার শিশু কন্যাসহ চারজন ওই রাস্তার গর্তে পড়ে আহত হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। রাতে ঝুঁকি নিয়ে লোকজনকে ওই সড়কে চলাচল করতে হয়।
রশিদ ব্রাদার্সের মালিক অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ ও বাবুল এন্টারপ্রাইজের মালিক রফিকুল হায়দার বাবুল পাঠান বলেন, ঠিকাদার বাহার উদ্দিন আমাদের প্রতিষ্ঠানের নামে কাজটি পেয়েছে। এ কাজের দায়-দায়িত্ব এককভাবে তার। আমরা যতদূর জানি, পৌর কর্তৃপক্ষ সময়মতো বিল না দেওয়ায় ঠিকাদার কাজটি ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পারেনি।
বাহার উদ্দিনের কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের নিকট এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
রায়পুর পৌরসভার মেয়র ও পৌর বিএনপির সভাপতি এবিএম জিলানী ও পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এটিএম সাদেক সাংবাদিকদের বলেন, কাজের গুণগত মান খারাপ হওয়ায় নির্মাণ কাজ স্থগিত রাখা হয়েছে। পুনরায় কাজটি না করে দেওয়ায় ঠিকাদারের বিল আটকে রাখা হয়েছে। জনদুর্ভোগের বিষয়টি চিন্তা করে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।